Skip to main content

হুজুগ-দেবী ও বাহানা-সম্রাট

ঘুরতে যাওয়ার জন্যে কত শত মজবুত হুজুগ মজুত রয়েছে। ছোট ঘুরতে যাওয়া, মেজ ঘুরতে যাওয়া বড় ঘুরতে যাওয়া। আহাঃ।  

কতদিন ঘুরতে যাওয়া হয় না, চলো ঘুরে আসি। পাহাড় ডাকছে গো, চলো তবে। জগন্নাথের মানত ওভার ডিউ, এবার না গেলেই নয়। মাইনে বেড়েছে গত মাসে, ঘুরে আসি। বোনাস আ গয়া, টিকিট কেটে ফেলা যাক। শরীর মন ভালো নেই, একটু বেড়িয়ে আসলে কেমন হয়? প্রবল স্ফূর্তি; দল বেঁধে বেড়িয়ে আসা যাক। মন কেমন বিকেলবেলা, চলো গঙ্গার ঘাটে। সময় কাটাবার  পার্কে হাঁটাহাঁটি। পায়ের তলায় আর ইলিশ ভাপায়; সর্ষে ম্যাজিকের জুড়ি নেই। ঘুরে বেড়াবার যুক্তি জোগাড় করে একদল মানুষ হিল্লে মনে ঘুরে বেড়ান; যেমন আমার সঙ্গিনীটি।

অন্যদিকে। যারা মুভ-টি-নট হয়ে ঘরের কোনে ক্যানিয়াকুম্যারি টু ক্যাস্মের এস্পার-ওস্পারে করে থাকেন, তাঁদেরও বাহানা-বাহিনী নিতান্ত নড়বড়ে নয়।
পাড়ার মণ্ডপে না বসলে পুজো গ্যাঁজলা মেরে যায়, এ সময় ঘুরতে বেরোবার মানে হয় না। উইকেণ্ড রেস্ত করে রেস্ট নেওয়ার সময়; বেফালতু বোলপুর গিয়ে হেজিয়ে মরার কি দরকার ? সমুদ্র বাদ কারন কুষ্ঠীতে আছে জলে ফাঁড়া বিটউইন আঠারো টু তেপান্ন। Acrophobia আর সর্দির ধাত, অতএব পাহাড় বাদ। কলকাতার ঘেমো ভিড়ে চটকে নিউমার্কেট ঘুরবার জন্যে রবিবারের সিয়েস্টা ত্যাগ করতে হবে, শেষটায় এমন দিন এলো ?  ঘরে বসে ল্যাদ খাওয়ার টাল-বাহানা মুলক যুক্তির লিস্টি অনেকে পকেটে রেখে চলা-ফেরা করেন। যেমন আমি।

দেবীর ভ্রমন-পিপাসায় ও নিজের গৃহ-আলস্যের যুদ্ধে দুজনেই অনবরত জিতে চলি।  তাই সিমলা বেড়াতে , হোটেলের বারান্দায় ফেলে আসা কলকাতার ব্যালকনির মেজাজ খুঁজে পেয়ে আমি বিভূতিভূষণ ও কফি-কাপে দিন উড়িয়ে দিই। আবার দেবী বাড়ির ছাদে উঠে বিকেলের পাতলা আলোয় পড়েন ভ্রমন কাহিনীর রগরগে সমস্ত প্রকৃতি প্রেম। এইটুকুতেই সংসারে থাকা।  

Comments

rdb said…
Egulo ki apnar Hujuge debi poren? Asto achen to mosai! khub e tension hochhe!

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু