Skip to main content

চৈত্র সেল কেলো

চৈত্র সেল হলো বাঙালি হুজুগের ভাঁটিখানা। অমুক ডিস্কাউন্ট তমুক ফ্রি’র চক্করে যে একটা তামাম জাতী কি বীভৎস ভাবে কাছাখোলা হয়ে পড়তে পারে তা মালুম করতে হলে এ সময়ে সন্ধ্যেবেলা গড়িয়াহাঁট ঢুঁ মারলেই চলবে।

ফুটপাত উপচে লোকের ঢল রাস্তায়, পুলিস বারোয়ারি পুজার ভলেন্টীয়ারের মত নাচনকোঁদন করে হিমশিম খেয়ে চলেছে। পুরো এলাকাটা গরম কড়াইয়ের মত টগবগ করছে আর আমি পাঁঠার মত ক্রমশ সেদ্ধ হয়ে চলেছি। পাশে ঝাঁ-চকচকে জিন্স যুক্ত বউ ডীস্কাউণ্ট সমেত বাঁকুড়া’র গামছা খুঁজে পাওয়ায় আহ্লাদে আট-খানা।

অক্সিজেন কমে আসছে। এপ্রিল গরমে প্যাচপ্যাচে জামা গায়ের সাথে লেপ্টে। পায়ের ওপর দিয়ে কত শত হিল-ময়ি চটি ও বিরাশি সিক্কার জুতো বয়ে যায় তার ইয়ত্তা নেই। তবু শালা সারা বছরের যত ঝরতি-পড়তি মাল,  চৈত্র-সেলের আছিলায় পাবলিক তা গিলেই ছাড়বে। ফেড আপ।

গামছার দোকানে দাঁড়িয়ে যখন অসহায় হয়ে ভাবছি যে ওই এক পিস গামছা সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে নিজকে টাঙ্গিয়ে দেওয়া যায় কিনা এমন সময় আমার পাশে লেপ্টে থাকা, ঘামে লটপট টাক সমেত এক মাঝ বয়েসি ভদ্রলোক আমার দিকে ফিরে বললেন “ দাদা এই মানিব্যাগ টা কি আপনার ?”

লে হালুয়া। ভদ্রলোকের হাতে আমারই মানি-ব্যাগ। মানি-ব্যাগ নিয়ে থ্যাঙ্ক ইউ বলতেই ভদ্রলোক গলা উঁচু করে বললেন “ কি ক্যালামিটি বলুন মশায়, এমন জাপটাজাপটি করে দাঁড়িয়ে রয়েছি, নিজের পকেটে হাত ঢোকাতে গিয়ে আপনার পকেটে হাত চালান করে দিয়েছিলাম। কি ভাগ্যি আপনি সেই ব্রাহ্ম-মুহূর্তে টের পাননি, নয়তো পকেটমার ভেবে আমার কেলিয়ে ছাড়তেন”।

ভদ্রলোক পকেট থেকে রুমাল বার করে কপালের ঘাম মুছলেন।
জিজ্ঞেস করলাম, “ ইয়ে, রুমাল টা নিজের পকেট থেকেই বের করেছেন তো ?”  

Comments

Unknown said…
হাহ হাহ হা ! বেশ মজার অভিজ্ঞতা তো !

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু