Skip to main content

শফিকের সাইকেল

-'এই দ্যাখ ব্যাটা, ওই পুরনো সাইকেল আর চড়তে হবে না, বাইক চালাবে এবার তর আব্বু.."

-'বেশ আব্বু, এবার তবে এই বাইকটা তোমার আর সাইকেলটা আমি চালাব, কেমন আব্বু ?"

-'আর সাইকেল কেউ চালায় নাকি রে, তুই আর একটু বড় হয়ে যা, তারপর তোকে আমি এক্কেবারে বাইক চালানো শিখিয়ে দেব, তখন দেখবি বাইক চালাবার কি আনন্দ'



-'কিন্তু আব্বু আমার সাইকেলটাই বেশি ভালো লাগে যে, কেমন সুন্দর তুমি ওতে করে রোজ আমায় বড়-বাজারে ঘুরতে নিয়ে যাও, কেমন সুন্দর বেল'টায় ক্রিং-ক্রিং শব্দ হয়, কেমন সুন্দর সবুজ রঙের বাক্স লাগানো সামনেটায়, মটর-সাইকেলে ভারী বাজে আওয়াজ আব্বু, আমি একটু বড় হলে তুমি আমায় ওই সাইকেল টা চালাতে শিখিয়ে দিও কেমন? কিন্তু কি, ওই সাইকেল টা কই? দেখছি না তো?'

-'ইয়ে..দ্যাখো দেখি বোকা ছেলের কথা, হিরো-হোন্ডা থাকতে কেউ আবার সাইকেলের খোঁজ করে নাকি ?

-'না না না, আমার ওই সবুজ বাক্স-ওয়ালা সাইকেলটাই বেশ, কোথায় বল আব্বু আমার সাইকেল'

-'ওই সাইকেল তো আমি বেচে দিয়েছি বাপ, তুই একটু বড় হলে আমি তোকে নতুন সাইকেল কিনে দেব, ওরকম পুরনো খ্যাংরা-কাঠি সাইকেলের কি দরকার'

-'না না না, আমার ওই পুরনো সাইকেল'টাই চাই, চাই, চাই,চাই, তুমি কাকে দিয়ে এসেছ আমার সবুজ বাক্সের সাইকেল, এখুনি নিয়ে এস আব্বু, নয়তো আমি কখুনো তোমার সাথে কথা বলব না', এই বলে , গোটা দুপুর জুড়ে ৬ বছরের শফিকের কি দুরন্ত কান্না..

********

সন্ধ্যেবেলা, খেলনা পিস্তল নিয়ে যখন শফিক তার বাবার পুরনো সবুজ-বাক্স সাইকেল চলে যাওয়ার শোক ভুলতে বসেছে, ঠিক তক্ষুনি তাদের ঘরের ছোট টিভিটার তাকিয়ে চমকে উঠলো শফিক !

-'হুই যে আমার সবুজ বাক্স সাইকেল'

টিভির স্ক্রিন জুড়ে তখন এক দোমড়ানো সাইকেলের ছবি ভাসছে, সাইকেলের সামনে দুরমুশ হয়ে যাওয়া একটি সবুজ বাক্স

'বড় বাজারে আজ যে সন্ত্রাসবাদী বোমা -বিস্ফোরণে একজন শিশু সহ ৬ জন সাধারণ মানুষ মারা গ্যাছেন, সেই বোমাটি রাখা ছিল একটু পুরনো সাইকেলের সামনে লাগানো একটু সবুজ বাক্সতে, আরও জানা গ্যাছে..'


টিভিতে সিরিয়াল-সিনেমা ছাড়া অনন্য কিছু দেখার শখ কোনদিনই ছিল না আশফাকের, আজি শুধু খবর'এর চ্যানেল চালিয়েছিলেন খবরটার জন্যে;

ছেলে শফিক'এর আকুল চিত্কারে কোনো সাড়া না দিয়ে, আশফাক উঠে গিয়ে টিভিটা বন্ধ করে দিলেন















Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু