
জুন মাসের সন্ধ্যে।
ঝমঝম বৃষ্টি। প্রবল, ছাতা-ডিসমিস করে দেওয়া বৃষ্টি।
লোড-শেডিং। প্রবল গপ্পিয়ে বন্ধু। তার রত্ন-সম রাধুনি বর্ধমানের দিবাকর।
মোমবাতি'র আলোয় জমাট আড্ডা। আড্ডা'র ক্যাটালিস্ট হিসেবে দিবাকর কুমারের পেঁয়াজি, বেগুনী,
লঙ্কা-পকোড়া (হু হু হু হহুহু, চোখে জল কিন্তু জ্বিবে দারুন), ডিম'এর ডেভিল, আম আচার'এর তেল
এবং আলু-সহ ভাজা মুড়ি। সঙ্গে ফ্রিজ-ঠান্ডা মিষ্টি ডাব'এর জল। আহহ... জিহ্ভার্গ্সম একেই বলে।
বৃষ্টি'র সন্ধ্যে। মোমবাতি আছে, তেলে-ভাজা মুড়ি আছে, ভূতের গপ্প হবে না?
সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করতেই সে উঠে ভিতরের ঘরে গিয়ে একটা পুরনো এবং ময়লা এক টুকরো ডায়েরী-ছেঁড়া পাতা এনে ধরিয়ে দিল। বললে, "পড়ে দ্যাখ, সুইসাইড নোট"
সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডে কনকন।
"দাদা,
দীপক'কে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব ছিল। ঠাকুমা'র পছন্দ করা ছেলের সঙ্গে বিয়ে মেনে নিতে পারব না।চললাম, তোরা ভাল থাকিস
ইতি
মণি"
-"এই সুইসাইড নোট'টা কার ?"
-"আমার বোন'এর। আমাদের পরিবারে আমার ঠাকুমার দাপট ছিল ভীষণ। মণি'র প্রেম করা উনি কিছুতেই মানতে পারেননি। জানতে পেরেই একরকম জোর করেই ওর বিয়ে ঠিক করেন ঠাকুমা আর বাবা। পাকা-কথার আগের দিন রাত্রে মণি হঠাত্ এই ডিসিশনটা নিয়ে ফ্যালে। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যায়। ও মারা যাওয়ার পর থেকেই ঠাকুমা একটানা হ্যালুসিনেট করতে থাকেন যে মণি'র আত্মা এসে ওকে জাপটে ধরছে। দু-দিনের মধ্যেই ঠাকুমার প্রবল জ্বর আসে, সঙ্গে বিকার ওর প্রলাপ। এক সপ্তাহ না ঘুরতেই ঠাকুমা মারা যান"
-"অহহ, সরি, কিন্তু এই সুইসাইড নোটের সঙ্গে ভূতের কী লিংক?"
-"বিশ্বাস করবি কি না জানি না, কিন্তু এটা একটা posthumous সুইসাইড নোট"
-"মারা যাওয়ার পড়ে লেখা সুইসাইড নোট মানে ?", আমি তখন উত্তেজিত।
-" হাইপার হয়ে যাস না, যা বলছি শুনে যা। এরপর বিশ্বাস করা তোর নিজের ওপর। ঠাকুমা যখন প্রবল জ্বর'এর মাথায় প্রলাপ বকে চলেছেন, যার বেশির ভাগ কথাই কেউ ধরতে পারছে না, অনেকেই বলেছিল যে ওকে নাকি মণি'র আত্মা চেপে ধরেছে। আমি অন্তত পাত্তা দিনি সেসব । জ্বর এতটাই ছিল যে ঠাকুমা বিছানা ছাড়তে পারতেন না। সাত দিন'এর মাথায়, মাঝরাত্রের দিকে আমি নিজের ঘরে পড়ার টেবিলে মাথা রেখে পড়ে আছি, ঘুম আসছে না। আচমকা দেখি ঠাকুমা ওই শরীরেই উঠে আমার টেবিলের কাছে চলে এসেছেন, উড়ো-চুল, লাল চোখ, শরীরে শুধু একটা সাদা থান জড়ানো, আর সেই মুখ আমি কখনো ভুলবো না রে, গোটা মুখে যেন রক্ত উঠে এসেছে। ঠাকুমা আমায় সোনভাই বলে ডাকতেন। কিন্তু সেই ঘোরে আমায় কি বললে জানিস?
বললে "দাদা সরে যা...", আর বলেই বরফ হাতে, এমন আসুরিক শক্তি নিয়ে আমায় ঠ্যালা দিলেন যে আমি সামলাতে পারলাম না, হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম চেয়ার সহ..., আর আমি পড়ে যেতেই ঠাকুমা আমার টেবিলে রাখা খোলা ডায়েরি আর কলম নিয়ে খস-খস করে ওই দুই লাইনের চিঠি'টা লিখেই লুটিয়ে পড়েন, মারা যান"
-"মানে..মানে তোমার বোন'এর এই সুইসাইড নোট'টা তোমার ঠাকুমা..বিকারের ঘোরে..?"
-"হ্যাঁ"
-"কিন্তু এটা তো আত্মা জাতীয় কিছু নাও...মানে সাবকনশাসে'ও তো..."
-" ঠাকুমা লেখা পড়া আদৌ জানতেন না স্যার, তাঁর অক্ষর জ্ঞান'ও ছিল না.."
( সঙ্গীর থেকে ব্লগে তার অভিজ্ঞতা দেওয়ার অনুমতি পেয়েছি, তবে পত্র-লেখিকার আসল নামের পরিবর্তে অন্য নাম ব্যবহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে )
Comments
http://www.bongpen.com/2007/06/ek-pitaa-ek-konnya-pitaa-classical.html