Skip to main content

আমি, আমার মন






পুরুষ অধ্যায়

অফিস ফেরত ক্লান্ত শরীরটাকে ঘেঁসটে কোনো রকমে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসে কলিং বেল টিপলাম; "টিং"! কোনো সাড়া শব্দ নেই ভিতর থেকে!

ফের টিং! চুপ!

টিং টিং! এবারও চুপ!

ঘামে চুপসে গিয়ে এবার মেজাজ চড়তে সুরু করলো! স্বামী গোটা দিন অফিসে দলাই মলাই হয়ে থেবড়ে বাড়ি ফিরছে, আর বউ এই ভর সন্ধ্যে বেলায় পড়েপড়ে ঘুমুচ্ছে! রাবিশ ইনসেনসিটিভ সংসার!

টিং টিং টিং টিং টিং টিং টিং! কলিং'এর স্টেনগান চালিয়ে দিলুম! ফল হলো কচু! সেই চুপ। এইবারে ব্রেনে শর্ট-সার্কিট সুরু হলো। বউ না লেডি কুম্ভ কর্ণ? অসহ্য! কোথায় এক কাপ চা হাতে ব্যালকনিতে ওয়েলকাম গোছের হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, তা না ঘুম? কলিং বেলের নেকু টিং'য়ের মাথায় আগুন! গুমা গুম দরজায় কিল মারতেশুরু করলাম।

তবুও নির্বিকার সমস্ত কিছু! ঘরের ভেতর থেকে টু শব্দটি নেই! এইবারে একটু চিন্তা হলো। পকেট থেকে মোবাইল বের করে ঘরের ফোনে ডায়াল করলাম। ভেতর থেকে ক্রিং ক্রিং শুনতে পেলাম। ফোনে বেজে গ্যালো! এইবার রাগ'এর সঙ্গে দুশ্চিন্তা জুড়ে গ্যালো। কপালের শিরায় চলকে ওঠা ব্লাড প্রেসার ঠোক্কর মারছে মনে হলো।

জোর-তার গলায় এবার চিল্লিয়ে উঠলাম বৌএর নামে, "শ্বেতাআআআআ ... দরজা খোলো"! এর সঙ্গে টিং টিং কলিং বেল আর দুমাদুম দরজা পেটাবার ককটেল চলু করলাম!

দড়াম শব্দে দরজা খুলে গ্যালো, আমার দরজা নয়, আমার প্রতিবেশী তাপসী বৌদি নার্ভাস হয়ে বেরিয়ে এলেন, " বলি হচ্ছেটা কি, এত শোর-গোল কেন?"

-"না মানে তখন থেকে ডাকছি তবু শ্বেতা দরজা খুলছেনা", বেকুবের মত বললাম!

-"আচ্ছা লোক তো তুমি, তোমার বউ দরজা খুলবে কি?", তাপসী বৌদি খেই-মেই করে উঠলেন, "সে তো আজি বাপের বাড়ি চলে গ্যালো, আরে তুমি'ই তো ওকে ভোর বেলা ট্রেনে তুলে দিয়ে এলে, ভুলে গেলে নাকি? "

অপরাধীর মত দরজার দিকে তাকালাম, আচমকা আবিষ্কার করলাম কড়ায় দেড় কিলো ওজনের তালা ঝুলছে, মনে পরে গ্যালো প্যান্টের ডান পকেটে চাবি আছে! অভ্যেসের বসে হিসেব একটু গুলিয়ে গেছিল!

ব্যাপারটা হালকা করতে তাপসী বৌদির দিকে তাকিয়ে একটু হ্যা হ্যা করে হাসতে চেষ্টা করলাম। বউদি চোখে পাকিয়ে কি যেন বিড়বিড় করতে করতে দুম করে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন, কি বিড়বিড় করছিলেন ঠিক শুনতে পেলাম না, বোধ হয় "আহাম্মক কোথাকার" বলে গেলেন!


নারী অধ্যায়

ব্যালকনি পেরিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে আলো জ্বালতেই মনে হলো পা'এর জুতোর নিচে যেন এক টুকরো কাগজ পড়েছে, ঝুঁকে পড়ে কাগজ টা তুলতেই দেখি আমার বউ'এর লেখা একটা চিরকুট:

" কতবার বলেছি জুতো পরে ঘরে ভিতর ঢুকবে না, ব্যালকনিতে জুতো খুলে আসবে! বদঅভ্যেসের ডিপো কোথাকার!!"

Comments

Unknown said…
Ami koekta kobita likechi..so ami ki apnake by any case pathate pari..just for review..jodi apni apnar blog e post koren..apnar mail-id ta peleo besh bhalo hoto.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু