Skip to main content

নাম নবমী


আমার এক দূর সম্পর্কের দাদু আছেন, মিঠে দাদু বলে পাড়াময় ফেমাস! মাঝে মধ্যেই তিনি আমার সাথে দিন কয় কাটিয়ে যান।বিরাশি বছর বয়েস হলেও তুরীয় মেজাজের ভদ্রলোক! গোলাপ চাষ করে আর দিনে দু পেগ হুইস্কি খেয়ে প্রবল ফুর্তিতে থাকেন। কলকাতার হুরুম হারুম হই হই রই রই থেকে একটু নিজেকে ইনসুলেট করতেই তার আমার কাছে বিহারের এই ছোট্ট সহরে এসে কিছুদিন কাটিয়ে যাওয়া। ভদ্রলোকের মেমরি অতি ধারালো! নিজের বিয়ের মেনু'তে কি কি পদ ছিল এখনো কর গুনে শুনিয়ে দিতে পারেন। অথচ অদ্ভূত ব্যাপার হলো এতবার আসা সত্ত্বেও আমার ড্রাইভার ধর্মেন্দ্র সিং'এর নামটি উনি বার বার গুলিয়ে ফ্যালেন।

কখন রামচন্দ্র
, কখনো মানবেন্দ্র, কখনো রবীন্দ্র, এমনকি একবার হনুমন্ত বলেও ডাকতে শুনেছি, কিন্তু কিছুতেই তিনি মনে করে ধর্মেন্দ্র বলে তাকে ডাকতে পারেননি। ধর্মেন্দ্র সিংহ'এর বিভিন্ন নামে সারা দিতে দিতে ক্রমশ দিশে হারা হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
একদিন রীতিমত দরবার করে মিঠে দাদুর কাছে অভিযোগ জানিয়ে সে অনুরোধ করলে যে তার পৈত্রিক নামটা যেন দাদু গুলিয়ে না ফ্যালেন।
মিঠে দাদু মন দিয়ে তার অভিযোগ শুনে গভীর অনুতাপ জানিয়ে বললেন, "তুই ব্যাটা ঠিক বলা হ্যায়, আমার নাম নিয়ে যদি কেউ ঘোটালা করেগা তো আমারও বহুত রাগ হোগা, সেটাই তো স্বাভাভিক হ্যায়! তো তোর নাম তবে কেয়া বলা? ধর্মেন্দ্র তো, আই সি, আমাকে একটা টেকনিক ধরতে হবে যাতে তোর নাম আমি না ভুলি! কেমন? ধর্মেন্দ্র ধর্মেন্দ্র ধর্মেন্দ্র! বম্বের নায়ক, সিনেমার হিরো ধর্মেন্দ্র! ধর্মেন্দ্র, ধর্মেন্দ্র, ধর্মেন্দ্র! ইয়েস, ধর্মেন্দ্র তোর নাম, তাই তো? বম্বের নায়ক? সিনেমার হিরো? ধর্মেন্দ্র? কি তাই তো?"
ধর্মেন্দ্র দেহাতি হৃদয় তখন নিজের নামের এত বড় Mnemonic Definition'এ আত্মহারা ! ধেই নেচে ধর্মেন্দ্র ঘোষণা করলে যে "দাদুয়া কো হামরা নাম ইয়াদ আ গলবা"!
আমায় demonstration শোনাবার আগ্রহে দাদু কে ফের বললে,"সাহিব কো বাতায়বে নাহি দাদুজি হামরা নাম কি ভাইল ছে?"দাদু তখন তথাগত হাসি ছড়িয়ে দিয়ে জানান দিলেন, "আছে রে বোকা, আর কি ভুলি তোর নাম? বম্বের নায়ক-সিনেমার হিরো, বম্বের নায়ক-সিনেমার হিরো, বম্বের নায়ক-সিনেমার হিরো! সলিড টেকনিকে মনে রাখা হ্যায়! বম্বের নায়ক-সিনেমার হিরো জিতেন্দ্র! কি হে জিতেন্দ্র, এবার খুশি তো? চলো ভাই, এহি খুশি মে জিতেন্দ্র আউর এক পেগ হুইস্কি বানাও"!

Comments

ওই হলো আর কি... জিতেন্দ্র আর ধর্মেন্দ্র কি আলাদা হলো রে ? তা হুইস্কি টা কী ব্র্যান্ড ছিলো রে ? :P
Oi holo ar ki... Jitendra ar Dharmendra ki alada holo re ??? thiki achhe... ta ebar bol to seshe jeta khawa holo sei "iye" tar brand ki chhilo re ? :P
queen's said…
ghotona ta ki shotti? shotti hole stock bote aapnar...and hats off to d whiskey..... :D kuchh to baat hai usme...manukhse ki oshadharon bhabe creative kore dichhe :P :P likes it dharmnedra to jeetendra :D
তুরীয় মেজাজ, ভালো লেগেচে

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু