Skip to main content

মনে রাখার ব্যাপার-স্যাপার

ন্যাবা-জ্যেঠুর বাড়িতে রাত সাড়ে এগারোটায় ঢুঁ মারতে হলো দাদুর হাঁটুর ব্যাথার হোমিওপ্যাথিক টোটকার জন্যে। ন্যাবা-জ্যেঠুর হোমিও-চিকিত্‍সাতেই দাদুর হাঁটু নাকি পুর্ণিমা-অমাবস্যাতে ম্যাক্সীমাম রিলিফ পায়। আজ আচমকা ব্যথাটা চাড় দেওয়াতে এই রাত-দুপুরে দাদু দেরাজ খুলে দেখলেন ওষুধের স্টক নীল। ন্যাবা-জ্যেঠু দাদুর মর্নিং ওয়াক সঙ্গী হওয়ায় রাত্রিবেলা প্রয়োজনে বিরক্ত করতে বিশেষ অসুবিধে নেই। ভদ্রলোকের হোমিওপ্যাথিতে এ অঞ্চলে বেশ পসার রয়েছে।সদ্য বিপত্নীক। এক মাত্র ছেলে বউ-বাচ্চা নিয়ে দিল্লিতে থাকে। পেল্লায় বাড়িতে একাই থাকেন।  

কলিং বেল টিপতেই ন্যাবা জ্যেঠু নিজেই দরজা খুললেন।দাদুর প্রয়োজনের কথা বললাম। ঘুম যে ভাঙ্গাইনি সেটা ন্যাবা জ্যেঠু নিজেই জানালেন; “যদিও আর্লি ট্যু বেডয়ের ফিলসফিতেই বিশ্বাস, তবে আজ জেগে রয়েছি অন্য কারণে, ছেলের তরফ থেকে বিশেষ ফোন আসবে”বিশেষ ফোন কেন জিজ্ঞেস করাতেই ন্যাবা-জ্যেঠু খোলসা করলেন : “গত বছর এই দিনে তোমাদের জ্যেঠিমা মারা গেছিলেন, তাই নিমুর (ন্যাবা জ্যেঠুর ছেলে)ফোন একটা এক্সপেক্ট করছিবেচারী ভারী মা ন্যাওটা ছিলোআজকের দিনটা নিশ্চই আমার সাথে ফোন করে একটু মন হালকা করে চাইবে। গোটা দিনের ব্যস্ততায় হয়তো ফোন করতে পারেনি, নিশ্চয় একবার ফোন করবে...” বলতে বলতেই ন্যাবা জ্যেঠুর ফোন বেজে উঠলো, “নিমু উইল লিভ ফর হান্ড্রেড ইয়ারস...কল এসেছে...মিনিট-পনেরো দাও আমায়, কথা বলেই ওষুধ টা এনে দিচ্ছি”। সঙ্গে একটা সাহেবী “এক্সকিউজ মী” জুড়ে ন্যাবা জেঠু পাশের ঘরে গেলেন কথা বলতেঠিক ৪৫ সেকন্ডের মাথায় ফেরত এলেন

-“কী ব্যাপার জ্যেঠু, লাইন কেটে গ্যালো নাকি?”, জিজ্ঞেস করলাম,
“না:”, জ্যেঠু হাসলেন, “কাল ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ণ ফাইল করার শেষ দিন, আমার ভারী ভূলো মন তো, তাই আমার চার্টার্ড-পুত্র আমায় মনে করিয়ে দিলে যাতে আমি এই বেসিক ব্যাপারটা ভুলে গিয়ে একটা গোলমাল না করে দিই, তুমি পাঁচ মিনিট বসো; আমি ওষুধ নিয়ে আসছি”

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু