Skip to main content

বারুদের গন্ধ

পোড়া বারুদের গন্ধ লিওনের ভারী প্রিয়যখনই মেশিন গানের গুমম-গুমম-গুমম শব্দ ভেসে আসে, লিওন ছুটে চলে যায় তাদের এক-কামরার এসবেস্টসের ঘরের কোণের এক মাত্র বন্ধ জানলার কোনের ছোটো ফুটোটার কাছে এবং মন ভোরে বারুদের গন্ধ শুষে নেয়। মা বলে এ গন্ধে নাকি বমি আসে, কে জানে বাবা, যখন থেকে লিওন গন্ধ চিনতে শিখেছে, তখন থেকেই বারুদের সুবাস চেনে লিওন

গত অক্টোবর মাসে যখন কিছুদিনের জন্য শহরে যুদ্ধ বন্ধ ছিল, সে ছিল ভারী আনন্দের সময়। সাত বছরের লিওন সেই প্রথম এক টানা সাত দিন বার্লি বা সেনাবাহিনীর বিলি করা শক্ত পাউরুটি না খেয়ে রোজ ভাত খেয়েছিলো। কিন্তু ওই সাত দিনের মধ্যে একটা ব্যাপারেই লিওনের একটু কেমন কেমন লেগেছিলো। কোনও বারুদের গন্ধ ওই কয়দিন নাকে লিওনের নাকে আসেনিদেশলাই-কাঠির পোড়া আগায় নাক ঠেকিয়ে দেখেছিলো লিওন, সে বারুদের গন্ধ অন্যরকমদিনে যখন দু ঘন্টার জন্যে কারফিউ ওঠে, তখন লিওন ওদের বাড়ির সামনের অপরিষ্কার ফুটপাথে ঘুর-ঘুর করে আসে-পাশের ঝুপড়ির কিছু সম-বয়েসির সঙ্গে। রাস্তায় যে কামানের ঘষটানির দাগ থাকে, তার থেকে গন্ধ আসে মেটে-তেলেররাস্তায় চলমান সৈন্যদের ভীড় থেকে ভারী হয়ে আসে ঘামের গন্ধসৈন্যরা কিন্তু সবাই বেশ মানুষমাঝে মাঝেই তার দাঁড়িয়ে ছোটো ছেলেমেয়েদের চুলে বিলি কেটে দেয়, জানতে চায় ওরা কেমন আছেছোটোরা কথা স্পষ্ট বলতে পারে না, কিন্তু  ওরা জানে সৈন্য দেখলেই চিত্‍কার করে বলতে হবে “স্বৈরতান্ত্রী শয়তানরা নিপাত যাক”
লিওন জানে না স্বৈরতান্ত্রী কারা, শয়তানই বা কারা? ওর মাও তো ওকে মাঝে মাঝে শয়তান বলে ধমক দেয়, দুষ্টু ছেলেরা কী তবে শয়তান? তবে কী লিওনদের নিপাত যাওয়া উচিত? লিওন অবশ্য পরোয়া করে না, কারণ নিপাত যাওয়া মানে যে কী, সেটাও লিওন জানে নাতবে হাত মুঠো করে চিত্কার করে বলতে বেশ লাগে ““স্বৈরতান্ত্রী শয়তানরা নিপাত যাক”যখন রাইফেল কাঁধে-সৈনিকরা লিওনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, লিওন তাদের আঙুল টেনে নিজের নাকের কাছে নিয়ে আসে; ওদের আঙ্গুলের চামড়া থেকে যে বেরনো যে বারুদের গন্ধ, তা যেনো আরো অপূর্ব যুদ্ধের বাজারে এইটুকুই লিওনের মজাযুদ্ধের-বাজার কথাটা লিওন মায়ের থেকে শিখেছে, মা বলে অনেক দিন আগে নাকি যুদ্ধ-টুদ্ধ কিস্যু ছিলো নালিওন অবশ্য সে সব সময়য়ের কোনও খবরই রাখে না, রাখবে কী করে? ওর তো যুদ্ধের বাজারেই জন্ম

লিওন শুধু এটাই বুঝতে পারে না, বারুদের গন্ধে মা এত বিরক্ত হয় কেনকেমন মোলায়েম, মাথা ঝিমঝিম করা, কেমন ঘুম পাড়ানি একটা গন্ধলিওনের তো চিরকালই বেশ লাগে এই সৌরভ এই সৌরভ কথাটা লিওন শিখেছে এক সৈনিক-কাকুর কাছ থেকে; কাকু বলেছিল বিশেষ ভালো গন্ধ কে, কেতাবী ভাষায় সৌরভ বলে। তো মোটের ওপর ছোট্ট লিওনের ভীষণ প্রিয় ছিলো এই বারুদের গন্ধ।

শুধু যেদিন একটা বেমক্কা যুদ্ধ বিমান এসে সাংঘাতিক একটা বেফালতু বোমা ফেলে গ্যালো তাদের বস্তিটার ওপরে, একটা বিকট যন্ত্রনার সাথে একটা বারুদের-গন্ধের হলকা ঢুকে পড়েছিল লিওনের নাক বেয়ে ওর বুকের ভিতর। লিওনের সাত বছরের জীবনে, শুধু মাত্র শেষ তিন মিনিট সে বারুদের গন্ধকে ভালবাসতে পারেনি বরং অসম্ভব গা-গুলিয়ে উঠেছিলো তার; নিজের রক্ত মাখা বুকের ওপর শেষ-বমিতে ভাসিয়ে দিয়েছিল লিওন।  

Comments

Dibyojyoti said…
Durdanto. Jeno sei Anondomela aar Shuktara'r chotobelar jomano juddhe'r golpo gulor ekta porlam.

You are talented man. Keep this going. :)

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু