
একটি দুর্ঘটনা।
স্মৃতির এলোমেলো হয়ে যাওয়া এক মানুষের কিছু অসংলগ্নতা, পুরনো খাতার পাতায় কিছু হিজিবিজি।
হিজিবিজি সর্বস্ব কাগজটার হাতে চলে আসা একান্তই আকস্মিক।
********
তখন থেকে রুমালের এক কোন মন দিয়ে চিবিয়ে চলেছি। নোনতা, বিস্বাদ। মিডিল টার্ম ফ্যাক্টরাইজেসনে তো এর আগে কখনো থমকে যেতে হয়নি। এই অঙ্কের বইটা কার? অভিরূপের?
রুমালটা থেকে ভারী বিকট গন্ধ আসছে, কতদিন ধোয়া হয়নি বোধ হয়। রুমাল কে ধুতো? মা? রুমাল মা’ই ধুতো, স্পষ্ট মনে পড়ছে এলুমিনিয়ামের বালতি, সাদা ফ্যানা,কল ঘর। মা’এর মুখ টা আবছা ভাসছে।
বালতি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, অথচ মা’র মুখটা অস্পষ্ট, ধুর!মা কানে ঝোলা দুল পরতেন, তাই না? নিশ্চয় পরতেন। আলবাত পরতেন।আচ্ছা, মা কে আপনি করে ভাবছি কেন? মা কে তো তুমি করে ডাকতাম, এই অভিরূপ নামের যে ছেলেটা সারাদিন আমার পাশে ঘুর-ঘুর করে, সেও তো নিজের মা’কে তুমি করেই ডাকে। না না, মাকে তুমি বলেই ডাকা ভাল।
রুমাল, মা, সব মিলে যাচ্ছে কেন? রুমাল বোধ হয় মায়েরাই ধুয়ে থাকে, তাই তো মা, তবেই তো রুমাল। কিন্তু মা না থাকলে? তখন রুমালের কী হয়?
অভিরূপ আমায় বাবা ডাকে, ভাল লাগে। বিশ্বাস করতে এত কষ্ট হয় কেন? দারুন ঝক ঝকে একটা ছেলে। দেবতার গ্রাস পুরোটা মনে আছে, পানপোসের লাল বাড়িটা মনে আছে, নয়ন তারা’র শাড়ির লাল পেড়ে হলদে আঁচল কি সুন্দর মনে পড়ে। শুধু অভিরূপ কেন মনে আসে না? অভিরূপের মা কি তবে আমার--? তবে শিউলির কি হল? অভিরূপের মা’কে ভয় লাগছে কেন? কষ্ট খুব হচ্ছে, খুব। কষ্ট মানেই তো খারাপ নয়, কষ্টে কান্না আসে। আমার কান্না ভাল লাগে।
মিডিল টার্ম’টা হয়ে গেল, দোতলার এই ব্যালকনিটা খুব সুন্দর। বিকেল বেলা এখানে বসে থাকতে কি ভালোই যে লাগে। ঠিক আমাদের পানপোসের বাড়িটার মত, অবিকল এরকম একটা বাড়ি আমি বানাতে চেয়েছিলাম হালিশহরে। এই জায়গাটা বোধ হয় বহরমপুর। হালিশহর নামটা যে কেন মনে আসছে কে জানে। শিউলি কি ওখানে থাকে?
আকাশ মেঘলা ছিলই, এই টুপটাপ বৃষ্টি শুরু হল, বৃষ্টির ফোঁটা ছিটকে এসে চা’এর কাপে পড়ছে—টপাত-চলাক-চল! দারুন, দারুন লাগছে, অভিরূপটা যে কোথায় গেল! আমি খুব খুশি এখন, কান্না পাচ্ছে! এই যে কান্না ভালোবাসা, এটাও তো একটা সিকনেস, তাই না? অভিরূপকে জিজ্ঞেস করব।
তমাল আমাদের ফার্স্ট বয় ছিল, কেন এ কথা মনে এল জানি না, হয়তো শিউলির জন্যে, শেষ করে দিল মেয়েটাকে তমাল। অভিরূপের মা’কে দেখলে এত ভয় হয়, শুধু ভয় না, অপরাধ বোধ জুড়ে বসে। যেদিন আমায় জড়িয়ে ধরলেন, কেন যে আমি ফস করে শিউলি বলে ডেকে ফেললাম, তারপর সেই ফটস-ফট চোখের জল। সব কান্না তো আনন্দের নয়। বুঝতে পারি। কেন যে অভিরূপের মা আমায় এত---, অস্বস্তি লাগে। তমালের কথা ভেবে ঘেন্না লাগে, আমি তমাল নয়!
বৃষ্টি মেশানো ঠান্ডা চায়ে তুলসী পাতার গন্ধ আপনা থেকেই চলে আসে, এটা আগে জানতাম না! অভিরূপের মা’এর একটা ভাল নাম দিয়েছি আজ, “শিউলি”! শিউলি কে আজ এই নোংরা রুমাল টা কেচে দিতে বলবো।
Comments