Saturday, July 1, 2023

অভ্রর জন্মদিন



- অভ্র! মেনি হ্যাপি রিটার্নস অফ দ্য ডে!
- থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ অরূপদা।
- কেমন আছ?
- খুব ভালো৷ অনেকদিন পর তোমার মেসেজ পেয়ে কী'ভালোই না লাগছে। আর আজকাল জন্মদিন-টন্মদিন বেশ মনে রাখছ দেখছি৷ বিয়েটা তা'হলে ক্যারেক্টার রিফর্মেশনে হেল্প করছে বলো।
- হা হা! বিয়ের খবরটা পেয়েছ দেখছি।
- ফেসবুক থাকতে এ'সব ব্যাপার চুপচাপ সেরে ফেলা ইম্পসিবল৷ যা হোক, কনগ্র্যাচুলেশনস। আমাদের পাওনা-ভোজটা ভুলে যেও না৷ তুমি শহরে ফিরলেই একটা আসর বসা চাই।
- লাইক গুড ওল' টাইমস। হ্যাঁ রে, তোর সেই গান-বাজনার অভ্যাসটা আছে তো?
- আজকাল হারমোনিয়াম ছেডে য়্যুকুলেলে ধরেছি বুঝলে। টুংটুং বাজিয়ে একের পর গাইছি আর ইন্সট্যাগ্রামে আপলোড করছি৷
- রিয়েলি! লিঙ্ক পাঠাস তো। শুনব।
- এই'যে। এ'টা গতকালই আপলোড করলাম৷ <লিঙ্ক>।
- বাহ্৷ এ তো দেখছি বাউল। শুনব।
- আরও কিছু আছে প্রোফাইলে৷ সময় পেলে সে'গুলোও শুনো। আর ফীডব্যাক দিও।
- এই ভিডিওতে দেখছি আমাদের পাড়ার দীপকও তোর সঙ্গে গলা মেলাচ্ছে। ও কেমন আছে?
- তোমারই ক্লাবে ভিড়েছে। মাসখানেক আগে বিয়েটা সেরে ফেললে।
- বটে! দাঁড়া। ওকে কংগ্রাচুলেট করে মেসেজ করি।
- লাভ নেই মেসেজ করে। সে এখন সোশ্যাল মিডিয়া ডিটক্সে আছে৷ হোয়্যটাস্যাপ বা কোনও মেসেঞ্জারে পাবে না। এসএমএস-ও সে দেখবে না৷ তাকে পেতে হলে একমাত্র উপায়, আদি অকৃত্রিম টেলিফোন।
***
অ্যালার্মটায় চমকে উঠলে অরূপ।
ফোন হাতে তুলে দেখলে:
"ওয়ান নিউ কনভার্জেশন ইনিশিয়েটেড অ্যান্ড সাকসেসফুলি কনক্লুডেড৷
ওয়ান পেন্ডিং অ্যাকশন পয়েন্ট"।
নোটিফিকেশনটা পড়ে মনটা দিব্যি ভালো হয়ে গেল৷ ব্যাক্তিগত এ-আই বটটা যে কী উপকারি। অরূপের আনসোশ্যাল বদনামটা এদ্দিনে ঘুচেছে। হুররাহ্ বলে একটা মার্কিন কোম্পানির তৈরি এই বট-অ্যাসিসস্ট্যান্ট কিনতে বেশ খানিকটা খরচের ধাক্কা, তবে একবার কিনে ফেললে কাজ হয় ম্যাজিকের মত। বট-বাবাজি দিব্যি নিজের প্রভুর কথাবার্তার স্টাইল ও ভাষার মারপ্যাঁচ রপ্ত করে নেয়; একশো বারোটা ভাষায় নিখুঁত ভাবে কাজ করে। ব্যাপারটাও জলবৎ। নিজের সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকসেস দিয়ে দাও। নিজের ব্যাপারে শ-খানেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বায়ো আপলোড করে দাও। তারপর, ইউজারকে ঠিক করতে হবে সে কোন ডিগ্রীর সামাজিক জীব হতে চায়; দশটা লেভেল, অরূপ নিজেকে ছয়ের ঘরে রেখেছে। ব্যাস, নিশ্চিন্দি। বট বাবাজি নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে খবর রাখবে কোন আত্মীয় বা বন্ধু কী করছে, তাদের জীবনের ভালোমন্দ রাখবে নখদর্পনে। আর তারপর অবিকল ইউজারের ব্যক্তিগত স্টাইলেই সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবে, চ্যাটে গল্প-আড্ডা জমাবে। বিশেষ দিনগুলোয় বিশেষ-বিশেষ মেসজ পাঠিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে। আর অন্য কারুর বোঝার উপায় রইবে না যে সেই চ্যাটগুলো আদতে অরূপের বদলে তাঁর আজ্ঞাবহ দাস, হুররাহ্ কোম্পানির বট, চালিয়ে যাচ্ছে।
খানিকক্ষণ আগেই যেমন দিব্যি সেই বট-ভাইটি অরূপের হয়ে হাজার পুরনো পাড়ার পরিচিত মুখ অভ্রর সঙ্গে গল্প করে ফেলেছে খানিকটা। স্বাভাবিকভাবেই অভ্র টেরও পায়নি যে সে অরূপের বটের সঙ্গে গল্প জুড়েছে। ম্যাজিক সে'খানেই৷ এ বট কিনতে গিয়ে অরূপকে মোটা টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে বটে, কিন্তু গোটা ব্যাপারটা যে পয়সা-উশুল পর্যায় গেছে, এ ব্যাপারে সে নিশ্চিত। যাক, অভ্রর মাধ্যমে বট জানতে পেরেছে যে আর এক পরিচিত মুখ দীপক সদ্য বিয়ে করেছে। অভ্রর মত দীপকও ছেলেবেলার পাড়ার বন্ধুদের মধ্যে পড়ে। যেহেতু দীপক সোশ্যাল মিডিয়ায় নেই, তাই বট পুরোপুরি কাজটা সেরে ফেলতে পারেনি।
এ'বার দীপককে একটা ফোন করতেই হয়।
***
- হ্যালো! দীপক?
- আরে। অরূপদা। কেমন আছ?
- আমি? ভালোই। কংগ্রাচুলেট করতে ফোন করলাম। বিবাহিত জীবন আশা করি ভালোই কাটছে।
- ওহ্। ধন্যবাদ অরূপদা।
- কী, ব্যাপার বল তো৷ এদ্দিন পর কথা হচ্ছে...তুই এত ঝিমিয়ে কথা বলছিস কেন?
- আমি ভাবলাম তুমি খবরটা জেনে ফোন করেছ..।
- কী খবর? খানিকক্ষণ আগে অভ্রর সঙ্গে হোয়্যাটস্যাপে কথা হচ্ছিল৷ সেই জানালে তুই বিয়ে করেছিস..।
- অভ্র? অভ্রর সঙ্গে তোমার খানিকক্ষণ আগে কথা হচ্ছিল?
- এই ধর, আধঘণ্টা আগে কথা হল। আজ সে ব্যাটার জন্মদিন তাই পিং করেছিলাম..।
- অরূপদা..।
- তা সেই বললে যে তুই নাকি..।
- অরূপদা। সামান্য গোলমাল হচ্ছে। ঘণ্টাখানেক আগেই একটা মোটরবাইক অ্যাকিসিডেন্টে সে..সে..। ঘণ্টাখানেক আগেই অভ্র মারা গেছে অরূপদা।
- কিন্তু..কিন্তু..।
- ও ফোনে কোনও এ-আই বট ব্যবহার করত শুনেছি। কী এক হুররাহ কোম্পানির সোশ্যাল বট..তা'তেই বোকা বনেছ হয়তো..সরি তোমার এ'ভাবে..।

No comments: