Saturday, July 1, 2023

ওট্টো



কাচের শিশিতে চিরকুট পুরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিতে পারাটাই বোধ হয় থেইজম। আস্তিকতা।

হয়ত যত্ন করে লেখা চিরকুটটা সত্যিই জলে যাবে৷ আর বরাতজোরে যদি কোনও এক অপরিচিতর নাগালে সে শিশি ভেসেও আসে, সে হয়ত চিরকুটটা পড়ে ভাববে, "আরে, এ তো নেহাতই বেফালতু ছেলেমানুষি"৷ চিরকুটের লেখাটা যে অত্যন্ত খাজা হয়েছে, সে চিন্তায় হয়রান হয়ে হয়ত মানুষটি শিশির সমুদ্রযাত্রা ব্যাপারটা পাশ কাটিয়ে যাবেন৷ কিন্তু আদত প্রাপ্তি তো চিরকুটটা নয়। ভাসিয়ে দেওয়া শিশির ছিপি খোলবার মানুষ যে কোথাও কোনও প্রান্তে রয়েছেন এবং সমুদ্রের ঢেউ সে মানুষকে খুঁজেপেতে ঠিক বের করবে; শিশির মধ্যে সেই আশাটুকু পুরে দেওয়ার সাহস একজন মানুষ করেছেন। সেই বোকামোটুকু পুষে রাখার মানুষ এখনও আছেন৷ সে'টুকুই ম্যাজিক৷
সেই সমুদ্রে শিশি ভাসিয়ে দেওয়া ম্যাজিকের ভরসাতেই এই পেল্লায় ভূমিকা লেখা৷ বিভিন্ন কারণে গোট দিনটা বড় বিরক্তিতে কেটেছে। মুখে ও মেজাজে একটা তিতকুটে ভাব৷ ভাগ্যের পান থেকে যেন চুন-খয়ের-সুপুরি-চমনবাহার-জর্দা সবই খসে পড়ছে আর দুনিয়াটা রসাতলে যাচ্ছে, এই ধরণের একটা খ্যাপাটে ভয় মাঝেমধ্যে মনের মধ্যে উঁকি মারে বটে৷ সেই বিরক্তিটা কাটাতে গিয়ে ডিনার সেরেই গেস্টহাউসের খাটে লম্বা হলাম; ঘুম ব্যাপারটা খুব কাজে দেয় এই ধরণের পরিস্থিতিতে। কিন্তু ঘুম তো আর চ্যাটজিপিটির মত আজ্ঞাবহ নয় যে "এসো ভাইটি" বলে হাঁক পাড়লেই পাশে এসে বসে দিব্যি বাহারে কোড লিখতে শুরু করবে৷
অগত্যা; অগতির গতি; নেটফ্লিক্স।
"আ ম্যান কলড ওট্টো"।
সিনেমা নিয়ে দু'টো ভালোমন্দ কথা বলব, সে গুণ আমার নেই৷ তবে একটা কাল্পনিক-শিশিতে একটা কাল্পনিক-চিরকুট কাল্পনিক কালি দিয়ে লিখে রাখলাম,
"
বন্ধু,
ওট্টোর গল্পটা রইল।
দেখো৷ কেমন? এখনই৷ অপেক্ষা-টপেক্ষা করে লাভ নেই৷ ওট্টো অ্যান্ডারসন।
যা কিছু খোকার আঁকা ছবি মত সুন্দর,
যা কিছু ছেলেবেলার শীতের বিকেলের স্মৃতির মত নরম,
যা কিছু বাড়ি ফেরার টিকিট কাটার মত মিষ্টি; সেই সমস্ত কিছু মিলিয়ে-মিশিয়ে এই ওট্টোবাবুর গল্প।
দেখো কিন্তু, হ্যাঁ?
একদম শুরু থেকে শেষ ফ্রেম পর্যন্ত৷ কেমন?
ওই যে রামকৃষ্ণ বলে গেছেন, স্টীমারে সবার আগে উঠতে আর নামতে হবে সবার শেষে। পুরোটা দেখো৷ প্রাণভরে দেখলে প্রাণ ভরবেই
ইতি,
......."।
এই চিরকুটটা লিখে,
ব্লগের শিশিতে ভরে;
আমি এই রাত প্রায় পৌনে দু'টোয় ইন্টারনেট সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলাম।
এই শিশি হয়ত কারুর কাছে পৌঁছলই না৷ হয়ত দু'চারজন এ চিরকুট পড়লে৷ কে জানে, কেউ হয়ত ওট্টোবাবুর গল্প এই রাতবিরেতেই দেখতে শুরু করলেন৷ খানিকটা দেখে কেউ হাল ছাড়লেন, আবার কেউ ভাবলেন- "চলনসই। বংপেনের আবার সব কিছুতেই আদেখলাপনা"।
কিন্তু আস্তিকতা কোথায়? বিশ্বাসের খেল কোথায়? ওই যে৷ কেউ একজন কোথাও হয়ত আছেন, যার এই রাতবিরেরে ওট্টোবাবুর গল্পটা শোনা বড্ড জরুরি ছিল।
'হয়ত', একটা প্রকাণ্ড রূপকথার মত "হয়ত"।

No comments: