Tuesday, November 17, 2020

অনুরাগের লুডো



অনুরাগবাবু আমার অত্যন্ত প্রিয়৷ তার মূলে রয়েছে "বরফি"। লোকমুখে ও বিভিন্ন রিভিউয়ের মাধ্যমে জেনেছি যে বরফিতে ভুলভ্রান্তি ও গোলমাল যথেষ্ট রয়েছে৷ কিন্তু গাম্বাট সিনেমা দেখিয়ে হিসেবে আমি বেশ বুঝেছি যে নিজের ভালোলাগাগুলোকে বুক বাজিয়ে আঁকড়ে থাকাটাই কর্তব্য৷  বরফি কতবার দেখেছি তার ইয়ত্তা নেই৷ সিনেমার টেকনিকালিটি বুঝি না - শ্রুতিদেবীর ছলছলে চোখের পাশাপাশি বরফি আর ঝিলমিলের প্রতি তাঁর অপত্য স্নেহ, ও'তেই এস্পারওস্পার হয়েছি, বারবার। মোদ্দা কথা হল, সিনেমাটি যে আগাগোড়া প্রবল যত্ন আর ভালোবাসায় তৈরি - সে সম্বন্ধে কোনও সন্দেহ থাকেনা। সে'খানেই অনুরাগবাবুর ভক্ত হয়ে পড়া৷ 
(আদতে হয়ত অনুরাগবাবু প্রবল অযত্ন আর অ-ভালোবাসায় বানিয়েছিলেন ছবিটা। তাতে আমার কী? আমার মনে হয়েছে 'বরফি'র ফ্রেমে ফ্রেমে রয়েছে স্নেহ, ভালোবাসা আর জ্বরে-জলপটি-মার্কা যত্ন৷ সেই মনে হওয়ার দামই তো লাখ টাকা)। 

যাকগে৷ এতটা পাঁয়তারা কষলাম এ'টা জানাতে যে "লুডো" দেখেছি৷ অনুরাগবাবুর সিনেমার ব্যাপারে আমার একটা বায়্যাস থাকবে, সে সম্ভাবনাও  উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ কাজেই গোড়াতেই বলে দি যে সিনেমাটা আমার বড় ভালো লেগেছে। সুপারডিলাক্স মার্কা একটা জিগস-পাজলামো আছে। গতি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সুতোয় সুতোয় সিনেমার প্রতিটি কণার জড়িয়ে থাকা৷ তবে আমার ভালো লাগা সেই গতি আর থ্রিলে নয়।

লুডোর কয়েকটা সাদামাটা মুহূর্ত বড় অনাবিল হয়ে মনে গেঁথে গেছে৷ প্লট গপ্প ট্যুইস্ট ক্লাইম্যাক্স- সিনেমা মাত্রই এ'সব থিওরি কপচানো হবে৷ তার ভালো খারাপ থাকবে৷ কিন্তু কিছু কিছু অনস্ক্রিন মুহূর্ত অমূল্য - সে'সব মুহূর্তের কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়াটাই আমার সিনেমা দেখা৷ এই যেমন কালপুরুষ সিনেমায় একটা রেস্টুরেন্টে বসে বাবা আর ছেলে খাওয়াদাওয়ার দৃশ্য৷ আপাতদৃষ্টিতে নিরেট৷ ডায়লগেও মারকাটারি তেজ থাকার কথা নয়। রাহুল বসুর বাংলাও  নিখুঁত নয়৷ অথচ সেই সিন থেকে আজও বেরোনো হয়নি, এখনও সে দৃশ্য দেখলে বুকের মধ্যে ওলটপালট হবে৷ হবেই৷ আর সে'খানেই লুডো আমার চোখে অনবদ্য, এমন বেশ কিছু সিকুয়েন্সের জন্য৷ 

একটা ব্যাপার না বললেই নয়, আপাত ক্লিশেগুলো নিয়ে বড় চমৎকার গল্প বলেন অনুরাগবাবু (স্রেফ বরফি দেখে কথাটা বলা৷ এই অপর্যাপ্ত স্যাম্পেলে স্যুইপিং প্রশংসা করতে পারাটাই বোধ হয় আদত ভক্তি)৷ লুডোতেও সেই ব্যাপারটাও ঘটেছে৷ বাপের হাহাকার আর স্নেহ, বদখত মানুষের মনের নরম, আলগোছে পড়ে থাকা একনিষ্ঠ প্রেম - এমন সব প্রবল বলিউডি ক্লিশেগুলোর সরবতে প্যরামাউন্ট সুবাস মিশিয়ে মনভালো করা বেশ কিছু মুহূর্ত তৈরি হয়েছে৷ উয়ো সব ফ্রেম মে ফির সে ওয়াপিস যায়েগা, আবার দেখব 'লুডো'৷ 

আর। সিনেমা জুড়ে যে'টা তুরুপের তাস - সে'টা হল সারল্য৷  প্রতিটি জটিল চরিত্রের সারল্যটুকুকে ছেঁকে তুলে তৈরি হয়েছে এই প্লট৷ 

তাছাড়া৷ ভালো সিনেমার একটা বড় সিগনেচার হল 'শো'-য়ের শেষে দর্শকদের মনে সিনেমার গানগুলোর প্রতি একটা আলাদা ভালোবাসা তৈরি করতে পারা, সুর, গায়কি, লিরক্সের বাইরে গিয়ে৷ আবাদ-বরবাদ আর হরদম-হমদম গানদুটো আমি আদৌ সিনেমা দেখার আগে শুনিনি৷ অথচ সিনেমাটা দেখার পর থেকে মনের মধ্যে এই দু'টো গানের সুর ক্রমাগত ঘুরপাক খেয়ে চলেছে৷ আর সুরের সঙ্গে চলকে উঠছে সিনেমার এক একটা মুখ, প্রবল ভালোলাগা সহ৷ (আর ওই সাতপুরনো 'ও বেটাজি ও বাবুজি' গানটা এমনভাবে মাখনে-ছুরি লেভেলে ব্যবহৃত হয়েছে, উফ। বাপি লাহিড়ির ক্রেড জিঙ্গলটির ম্যাজিকও হার মানতে বাধ্য)

ক্রিটিসিজম? আলবাত আছে৷ বেশ কিছু জায়গার ডায়লগ শীর্ষেন্দু লিখলে যেন আরও ভালো হত৷ বেশ কিছু দৃশ্যের বর্ণনা সিনেমার বদলে সঞ্জীবে কলমে পড়তে পারলে আরও লাগসই হত যেন।

6 comments:

Gautam Pal said...

ভালো লেখা

Unknown said...

Review pore cinema porte ichhe korchhe....

Soumyadeb said...

এক মাস হয়ে গেল। কবে আসবে আবার নতুন লেখা?

Soumyadeb Chakraborty said...

এক মাস হয়ে গেল। কবে আসবে আবার নতুন লেখা?

Samik said...

Anek din lekha paini. Asha kori shob thikthak, ar siggiri apnar anek gulo lekha eksathe porte parbo. :)

aNc blogging said...

খুব ভালো লাগলো লেখা টি পড়ে|

Latest Government Jobs Alert সরকারি চাকরির খবর 2021