Skip to main content

মামার বাড়ি


- এই দ্যাখ...।

- মামা...মামা গো..এ'টা?...মানে...মামা...!

- দো'তলা। দেড়হাজার স্কোয়্যারফুট নীচে, দেড়হাজার স্কোয়্যার ফুট ওপরে। মার্বেল ফ্লোরিং। দু'টো মডিউলার কিচেন। টোটাল চারটে বাথরুম, একটায় আবার নীল রঙের বাথটাব। দু'টো চমৎকার ব্যালকনি..।

- মামা...কিন্তু এ'টা তো...।

- সাউথ ওপেন রে। আহা, বড় ব্যালকনিতে বসলে চানাচুরের স্বাদ ডবল হয়ে যায়, মাদুরে পশমের ছোঁয়া পাওয়া যায়..।

- কিন্তু মামা, এ যে...।

- জানি। এত সস্তায় এমন দাঁও মারতে পারব ভাবিনি। 

- তুমি কিনে নিয়েছ? 

- নয়ত কী? শ্যামনগরের জমিটা বেচে দিলাম....।  

- তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে মামা?

- জিনিয়াসকে পাগল বলার বদ অভ্যাসটা সমাজ আর ত্যাগ করতে পারবে বলে মনে হয়না রে ভাগ্নে। 

- মামী জানে?

- মামী কি এমন ব্যালকনি মূল্য বুঝবে রে? নাহ্।  শ্যামনগরের জমিতে টমেটো চাষ করার বিটকেল স্বপ্ন নিয়েই সে মরল। ধেত্তেরি। 

- মামা গো...কিন্তু তাই বলে এই...।

- তবে বগলাকে ক্রেডিট না দিলে পাপ হবে৷ রাতে তান্ত্রিক হলে কী হবে, দিনেদুপুরে ওর মত করিতকর্মা রিয়েলএস্টেট এজেন্ট মেলা ভার।  খবরটা চোরাগোপ্তা সেই জোগাড় করে এনেছিল। ইনফ্যাক্ট,রাতারাতি শ্যামনগরের জমি বেচার ব্যবস্থাও সেই করে দিয়েছে।  একটু সস্তায় ছাড়তে হল বটে, তা যাকগে। নয়ত এই প্রাসাদটা হাতছাড়া হয়ে যেত রে।

- তোমার মাথায় পোকা পড়েছে না চোখে ঠুলি?

- শাট আপ। কলেজে গিয়ে তোর বড় চ্যাটাংচ্যাটাং কথা হয়েছে ভাগ্নে। খুব লায়েক হয়েছিস, তাই না? দু'পাতা ইংরেজি পড়ার কনফিডেন্সে মামাকে ইনসাল্ট করা? এমন হাইক্লাস বাড়ি আশপাশের পাঁচটা পাড়া ঘুরে একটাও পাবি রে ইডিয়ট? মানছি এখন আশেপাশে জঙ্গল রয়েছে। কিন্তু বগলা মিউনিসিপালিটির ফাইল ঘেঁটে গোপন খবর বের করে এনেছে। ওই দক্ষিণের দিকে যে জঙ্গল দেখছিস? ও'টা সাফ করে শপিং মল বসবে; চারতলা, সিনেমা হল সহ। উত্তরের দিকে আগাছা সাফ করে তৈরি হবে মাল্টিস্পেশ্যালিটি হসপিটাল। পূর্বে থাকবে চিল্ড্রেন্স পার্ক আর পশ্চিমে একটা পেল্লায় জলাশয় না বে অফ বেঙ্গল কিছু একটা বসাবে। আরে গোটা রাজারহাট এসে বসবে এখানে...।

- বগলার মত একজন ফোরটুয়েন্টির কথা বিশ্বাস করে শ্যামবাজারের জমি জলে দিলে মামা?

- তবে রে রাস্কেল?

- এ'টা দোতলা বাড়ি? চোখ কচলে দেখো দেখি।  এ'টা যে বগলার মগজধোলাই যন্ত্র, জঙ্গলের মধ্যে এনে লুকিয়ে রেখেছে। সে ব্যাটা তোমায় এ যন্ত্রের মধ্যে নিয়ে গেছিল বুঝি?

- তুই একটা আস্ত শয়তান। গুরুজনের সঙ্গে ওপরচালাকি? আমি তোর নামে মামলা করব, গুণ্ডা লাগাব তোর পিছনে।  এ'টা যন্ত্র? স্পষ্ট দেখতে পারছি দোতলা বাড়ি..।

- উফ মামা...। এটা বাড়ি?

- আলবাত বাড়ি। দোতলা প্রাসাদ। ওই যে, ওইদিকে দ্যাখ বাড়ির দেওয়ালের গায়ে মার্বেল ফলকে লেখা আছে বাড়ি নাম..।

- বাড়ির নাম...?

- ভালো করে দেখ। স্পষ্ট লেখা আছে; "ডেমোক্রেসি"।

Comments

অসাধারণ পাঞ্চলাইন

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু