Skip to main content

লুডো


- বাদাম দেব নাকি?

- নেব। নিলে একদান লুডো খেলবে?

- বিক্রি বন্ধ করে তোমার সঙ্গে লুডো খেলব বিল্টুবাবু?

- চার প্যাকেট বাদাম আর দু'প্যাকেট কাঠিভাজা কিনব। প্লাস এক প্যাকেট মিষ্টিবাদাম।

- টিউশনির টাকা মেরেছ?

- মেজমাসী যাওয়ার আগে গোপনে বখশিশ দিয়ে গেল, কড়কড়ে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট।

- বেশ। তবে একদান। আমি লাল হলুদ নেব।

- বসে পড়ো।

- টিউশনির ব্যাগে লুডোর বোর্ড আর ঘুটি নিয়ে ঘুরছ। বিকেলে একলা ঘাটের বেঞ্চিতে বসে। ব্যাপার কী বিল্টুবাবু?

- চাল দাও।

- সোজা ছক্কা। বাহ্। আচ্ছা, টিউশনি কামাই করেছ?

- তা'তে তোমার কী?

- মাধ্যমিকে ফেল করবে?

- ফার্স্ট ডিভিশন কেউ আটকাতে পারবে না।

- বিকেলে ঘাটে বসে লুডো না খেললে আরো দু'নম্বর বাড়ত।

- দু'প্যাকেট বাদাম না হয় বেশি নেব। ঘ্যানঘ্যান বন্ধ করবে?

- একশো টাকার খবরটা ভাঁওতা নয় তো?

- বুকপকেটে খসখস করছে। তাজা নোট। এই দ্যাখো।

-  বুকে না হয় একশো টাকার নোটের খসখস। গলায়?

- খেলতে হবে না তোমার লুডো। তোমার বিক্রির সময় নষ্ট করে এ'খানে বসতেও হবে না। এই সময় নদীর ধারে কত মানুষজন আসে। কত লোকে বাদাম কেনে। তুমি এসো'খন।

- টিউশনি?

- একটু দেরী হয়ে গেছে। তবে যাব।

***

- বাবা, এই অসময়ে অফিসে চলে এলে?

- এমনি আসিনি। সঙ্গে লুডোর বোর্ডও আছে। এই যে।

- কিন্তু বাবা, এখন আমি ব্যস্ত..। একটু জরুরী মিটিং আছে সন্ধেবেলা।

- টুক করে এক দান খেলে নেব। আমার লাল হলুদ।

- কিন্তু বাবা...।

- না হয় এখন ভালো চাকরী করো। তাই বলে বাৎসরিক ট্র‍্যাডিশনকে ল্যাং মারবে বিল্টুবাবু? 

- পাক্কা এক দান কিন্তু। কনফারেন্স রুমে চলো।

- ভাগ্যিস সে'দিন ঘাটের ধারের বেঞ্চিতে স্পট করেছিলাম।  নয়ত খামোখা মনখারাপে টিউশনে ফাঁকি পড়ত।

- সে এক ইতিহাস। কিন্তু বাবা, নিজের বাদাম বিক্রি বন্ধ করে লুডো খেলাটা ফাঁকিবাজি নয়?

- আমার মনখারাপটা মনখারাপ নয়?

- আজ আমার শুরুতেই ছক্কা।

- মেজমাসীর বখশিশটা সেই কবে থেকে আমার পাওনা।

- হেহে। বুক পকেটে কড়েকড়ে টাকার খসখস? শুনবে?

- আর গলায়?

- বাবা, এই দিনটা খুব খারাপ। তাই না?

- খুউব। ধুস, আমার আবারও পুট...তোমার মা এমন ধুপ করে চলে গেলো তার আগের বছর, বিল্টুবাবু। তবে আমি খুব চেষ্টা করেছিলাম।

- জানি বাবা। বারবার এ কথা বলো কেন?

- এ দিনেই সে চলে গেছিল। প্রতিবছর এ দিনটাতেই তাই..তাই বার বার বলতে ইচ্ছে করে..। আর তাই বছরের এ দিনটায় বাদাম-বিক্রি বন্ধ রাখলেও তা'তে ফাঁকি নেই..।

- বাবা, এই কনফারেন্স রুমে লুডো কী বেমানান। মেজাজটাই মাটি।  চলো ঘাটের বেঞ্চিতেই যাই, সে'খানে লুডো পেতে বসি।

- ও মা, তোর সন্ধেবেলার মিটিং?

- বছরের এ দিনটায় মিটিংয়ে ডুব দিলেও তা'তে ফাঁকি নেই..।

- তা'হলে চটপট!

- ঝটপট!

- আচ্ছা বিল্টুবাবু, ছোট্টবেলায় ঘাটের সেই বেঞ্চিতে তুমি মায়ের সঙ্গে প্রায়ই রাত্রে এসে বসতে। মা তোমায় জড়িয়ে কীর্তন গাইত। বিক্রিবাটা শেষে আমি পাশে এসে বসতাম..তুমি ঘুমিয়ে না পড়া পর্যন্ত মায়ের গান থামত না। আমি সেই সুরে দুলে দুলে পয়সাকড়ি গুনতাম। তারপর ঘুমন্ত বিল্টুবাবুকে কোলে নিয়ে বাবা-মা ঘরে ফিরত...তোমার মনে পড়ে? বিল্টুবাবু?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু