Monday, February 29, 2016

ডক্টর

বুকে স্টেথো চেপে বসে রইলেন মাধব ডাক্তার। ঠায়। যদি ধুকপুকুনি ভেসে আসে। যদি।

খানিক পর স্টেথো সরিয়ে কান চুলকে নিলেন তিনি। বয়েসের কান, বলা তো যায়না; নরম ধুকপুক যদি সহজে কানে টোকা না মারে?

তারপর ফের মন দিলেন স্টেথোস্কোপে।
"আয় ধুকপুক আয়, আয়, আয়, আয়"।

বড় বেআক্কেলে বেয়াদপ বুক। হাজার ঠেলাতেও রা কাড়লে না।

- আপনি ডাক্তার?
- নয়তো কী? ময়রা?
- ডাক্তার হলে হাতুড়ি কই?
- যাব্বাবা! এ কী রসিকতা!  এই যে। অ্যাই দ্যাখো স্টেথোস্কোপ। বুকের ধুকুরপুকুর চট করে মেপে বলে দিই হাল ক্যাইসন।
- বটে? তা আমার লাশের হাল কেমন বুঝছ ভাইটি?
- লাশ? মুখে ঝ্যাঁটা। দিব্যি ভুঁড়ি বাগিয়ে খোশ গপ্প করে যাচ্ছ, তোমার আবার লাশ হবে কেন?
- আহা! আমি লাশ হতে যাব কেন? আমি তো বোধিসত্ত্ব। এই যার বুকে স্টেথো ধরে রয়েছ, সে আমার দু'জন্ম আগের শরীর। এখন দিব্যি লাশ।
- ভূ....ভূ...।
- নিজে লাশ হয়ে অন্য লাশ দেখে ভূতের ভয়? তোমার মাথা গেছে মাধব ডাক্তার।
- ননসেন্স। ইস্টুপিড। আমি লাশের বুকে স্টেথো চেপে ধরেছি? আর আমি নিজেও লাশ? তুই লাশ। তোর বাবা লাশ।
- চটছ কেন মাধব ডাক্তার! লাশ বলে কি মানুষ নও? তোমার ওপর আমার বড় মায়া। গত জন্মে আমি যে তুমি হয়েই কাটিয়েছি মাধব ডাক্তার।
- দূর হ! দূর হ!
- ডাক্তার! ধুকপুক নেই গো। নেই।
- মিথ্যে। তুই মর। মর।
- নেই। ধুকপুক নেই ডাক্তার। নেই।

Sunday, February 28, 2016

তিন জনের গল্প

সুকুমার 

এক বিজেপি সাপোর্টার সুকুমার রায় ভালোবাসে।
এক তৃণমূল সাপোর্টার সুকুমার রায় ভালোবাসে।
এক সিপিএম সাপোর্টার সুকুমার রায় ভালোবাসে।
সে এক বিশ্রী ব্যাপার। পুলিশ ডাকতে হল। র‍্যাফ নামাতে হল তাদের ঘিরে।
ফেসবুক বন্ধ হওয়ার জোগাড় যে। ডেমোক্রেসি দুম করে লগআউট করে বেরিয়ে গেল বলে।


ধোনী

কোনও একদিন।
কোনও এক ম্যাচের শেষে।
একটা স্টাম্প মাথা থেকে বেল ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে আসবে গুটিগুটি। মহেন্দ্রবাবুর মাথা থেকে হেলমেট সরিয়ে সে বলবে "লেটস গো ক্যাপ্টেন, লেটস গো"।


বনলতা 

- আপনিই জীবনবাবু?
- হ্যাঁ। তবে আপনাকে আমি ঠিক..।
- আমি বনলতা।
- সেন?
- সেন।
- সফেনে ছন্দ মেলানো সেন?
- আজ্ঞে।
- আহ। শান্তি। বনলতা। আহ! লতা বলে ডাকব আপনাকে?
- এ মা! তার চেয়ে আমায় বরং আমার ডাকনামেই ডাকুন।
- আপনার ডাকনাম কী বনলতা?
- ট্রাম।

দিনের খাওয়া

ব্রেকফাস্ট

- গুড মর্নিং।
- ব্রেকফাস্টে লুচি বোঁদে?
- কই, না তো।
- ইয়ে "গুড মর্নিং" ঝুঠা হ্যায়।

লাঞ্চ

- লিস্ট তৈরি?
- তৈরি মামা। 
- বঢিয়া। বতাও।
- ফিশ ফ্রাই।বাসা না। ভেটকি।
- গুড। 
- পোলাও।
- ঘি কড়াইশুঁটি সাদা না কাজু কিসমিস হলুদ?
- হলদে।
- ফাইন। দ্যাট ইমপ্লাইজ মাটন কষা ইজ নেক্সট।
- ডেফিনিটলি। আর পোনা কালিয়া।
- ব্রাভো। অ্যাপ্রুভ্‌ড।
- ইয়ে। সাথে ভাজা হিসেবে...।
- ভাজা হিসেবে?
- একটু পনীর ভুর্জি।
- সুচিত্রা সেনের ড্রেসিং টেবিলে আফটার শেভ লোশন? খাওয়ার পাতে থার্মোকল?


ডিনার 

অন্ধকারের ঝোলে মাখা লাঠির ভাত।
অনশন ভাঙার ঢেঁকুর শুনে চোখ বুজে ফেললে বিব্রত ছিছিটিভি।


বুলো সিং আর সর্দার সিংয়ের বাড়ি ফেরা

- বুলো সিং। থলে নিকালো।
- সর্দার। থলে? থলেতে কী হবে?
- কী হবে মানে? মালপত্তর যা আছে। থলে মে ডালো। বালিশের ওয়াড় , দাড়ি কামানোর বাক্স, তোষক, সর্ষের তেলের শিশি, হোমিওপ্যাতির বই, দস্তাবেজ, বাসনপত্তর...। 
- কেন? হল কী?
-  ওয়াপিস। ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন। সর্দারবাবুর প্রত্যাবর্তন। বুলো সিংয়ের সাথে। 
- দেশে? ফেরতা?
- পত্রপাঠ। তুরন্ত। এখুনি। চটপট। 
- সে কী! দেশে ফেরত?
- দেশেই যেতে বলছি। কাজাকিস্তানে না। অত চিন্তা কিসের? 
- চাকরী? তার কী হবে? চাল, ডাল, রোব্বারের ব্রয়লার, টু পাইসের মানি অর্ডার; সে'সবের কী হবে?
- ধর্মতলায় গামছা বেচব! 
- তার চেয়ে মোবাইলের স্ক্রিন গার্ড বেচলে বেশি পয়সা।
- বড় বেশি কথা বলো বুলো সিং। থলি ভরো। জাহাজের সেকেন্ড ক্লাস টিকিট। ফার্স্ট ক্লাস রিটার্ন। স্ট্রেট টু আরামবাগ। জোড়া হাঁসের ডিমের মামলেট। মায়ের স্পেশাল পেঁয়াজ ফোড়ন দেওয়া মুসুর ডাল। হাপুস হুপুস দুপুরে ঘুম। 
- হবে না।
- মানে? 
- কোন মতেই হচ্ছে না। থলেটলে বের করে লাভ নেই। রাতের খাওয়ায় আলু সেদ্ধ মুলো-ঘণ্ট আর টমেটোর চাটনি। দিব্যি হয়েছে। 
- দশ বছর হয়ে গেলো বুলো সিং। বিদেশবিঁভুইয়ে আর কদ্দিন? টাকাটাই দেখলে বুলো সিং? বাড়ির ছাদের টবের কাঁচালঙ্কা ভুললে চলবে? সে সুবাসে ভাতের ঢিপিতে বসন্ত বুলো সিং। বিদেশের মুলো আর কদ্দিন? 
- সর্দার। 
- বুলো সিং।
- দশ বছর হয়ে গেল। 
- হয়ে গেল গো বুলো সিং। হয়ে গেল। 
- মাসীমা বড় ভালো ডিম ভাজেন। জোড়া হাঁসের।

- তা ভাজে। মা তো। নরমে নরমে। সর্ষের তেলে। ছাদের টাবের লঙ্কা কুচোনো। বুলো সিং। বাড়ি যাবো। আরামবাগে যাব। গামছা বিক্রির টাকায় ভাতে সুবাস আনবো। 
- আরামবাগ ফেলে আর এলে কই সর্দার। 
- বুলো সিং।
- সর্দার।
- দোতলার পশ্চিমের ঘরের জানালায় হলুদ ছোপানো পর্দা, সবুজ গ্রিল। ও পাশের ছাদের পাঁচিলে মিনুমেনি ল্যাজে রোদ নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। বুলো সিং। থলে লাও। 
- ভাত বেড়েছি। খেতে এসো সর্দার। কাল আপিস।
- বুলো সিং। গামছা বিক্রি? স্ক্রিন গার্ড বিক্রি? ধর্মতলায়? ইডেনে খেলা থাকলে কাগজের তিরঙ্গা টুপি বিক্রি? হবে না? 
- মুলো-ঘণ্টে ঝাল দিয়েছি। বুঝেশুঝে ভাত মেখো।
- থলে আনবে না বুলো সিং? জাহাজের সেকেন্ড ক্লাস টিকিট? ফার্স্ট ক্লাস রিটার্ন? মায়ের হাতে ভাজা জোড়া হাঁসের ডিমের মামলেট? 
- পরশু মাসের পয়লা সর্দার। মানি অর্ডার পাঠানোর দিন।
- টমেটো চাটনি বুলো সিং? টমেটো চাটনি? 
- সর্দার। দশ বছরে তোমার গায়ে গন্ধ যায়নি। 
- কিসের?
- আরামবাগের ছাদের টবের লঙ্কাগাছের পাতার। 
- বুলো সিং। মুলোঘণ্ট অউর টমেটো চাটনি লাও। 
- কাল বাজার থেকে হাঁসের ডিম আনব'খন। 
- তুমি পারবে?
- আমি তো মাসীমা নই। আমি তো বুলো সিং। তবে চেষ্টা করব, নরমে ভাজার। সর্ষের তেলে।  

Saturday, February 27, 2016

দীপক চ্যাটার্জী আর আবছায়া

কনুইয়ের নিচ পর্যন্ত গোটানো খয়েরী সাদা চেক জামার হাতা। বুকের দু'টো বোতাম খোলা। দীপক চ্যাটার্জীর মোজা জোড়া জুতোয় আর জুতো জোড়া হাতে। প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটুর ওপর। গোড়ালির বেশ কিছুটা ওপর পর্যন্ত জল, বাড়তি ঢেউয়ের আনাগোনা হাঁটু ছাপিয়ে প্যান্ট ছোপাচ্ছে অহরহ। 

মুখে ঝাপটে পড়া হাওয়া। হাওয়া। রাতের হাওয়া। সমুদ্র চষা হাওয়া কিন্তু ঝোড়া নয়, মিঠে। এদিকটা ফাঁকা। কিন্তু দীপক চ্যাটার্জী একটা অবিশ্বাস্য একা না থাকার জেদ নিয়ে লোফালুফি করে চলেছেন। ভলকে ভলকে মুহূর্তরা চোখ নাক মুখ ছুঁয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে, দীপক পালটা ঢেউয়ে বঙ্গোপসাগরকে চুবনি খাওয়াচ্ছেন। 

মনে মনে। 

কাঁচা সন্ধ্যেরা বড় বেশি স্মৃতিগ্রাহ্য। সন্ধ্যারা বুকপকেটে বাড়ে। ঢেউ হাওয়ার ঘর্ঘস শোঁশোঁ ছাপিয়ে সাইকেল বেলের টুংটাং টের পান দীপক চ্যাটার্জী। সামুদ্রিক আকাশের নিংড়ে ঝেড়ে ফেলা অন্ধকার ঘোলাটে হয়ে আসে তার চোখের সামনে, চাষিপাড়ার দক্ষিণের সরু গলিটার পোলের বাতিতে। দীপক চ্যাটার্জী বোতাম খোলা বুকের পরিসরে চেনা শিরশিরানি অনুভূত হয়।   সে সুবাসের সাথে সে গলির আলো মিশে থাকতো। ঘোলাটে কালচে শ্যাওলা মেশানো; আদর পাকিয়ে আনা আলোর সলতেটুকু সে গন্ধে। নরম। পশমের মত নরম গন্ধ। ল্যাভেন্ডার।  তাতে শাড়ির আঁচল মিশে যেত। সুতির শাড়ি। সুতির ব্লাউজ। ক্লাস টুয়েল্ভ সাদা লাল পেড়ে। আঁচলে ল্যাভেন্ডারে, শ্যাওলায়, হলদে ম্যাটম্যাটে আলো মেশানো সুবাস নিষ্পাপ বয়ে আনত।  

গলিটা পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বেঁধে ফেলতে পারত। বেঁধে ফেলেও। আজও। আজহারি কবজির মোচড়ে। 
সবুজ হারকিউলিস সাইকেলের ডগা ছুঁয়ে দাঁড়ানো মেরুন লেডিবার্ডের সামনে রাখা অদরকারি বাস্কেট। অদরকারি খাতাপত্র রাখা। সমুদ্র ঘন হয় আসে, সন্ধ্যেগুলো ঝাপটা দেয়।  

"বাবু, এসেছিস?"। 

আবছায়া ফুঁড়ে ঘুরে দাঁড়ান দীপক চ্যাটার্জী। 
যেমন ঘুরে দাঁড়ানো পুরনো গলির কোণে। টুংটাংয়ে। লেডিবার্ডের বেলটুকুও হারকিউলিসের চেয়ে নরম; আসমানি। 

"বাবু"। মেঘের মত ভাসমান। অপেক্ষমাণ। সজল। মেঘে ল্যাভেন্ডারের গন্ধ। লেডিবার্ডের বাস্কেটে রাখা অঙ্ক খাতার গন্ধটুকুও চেনা। ল্যাভেন্ডার মেঘ, সুবাসে ভাসা গলি। গলির ঢেউ গোড়ালি বেয়ে সম্বিতে টেনে আনে। 

বুকে ঝনাৎ মোবাইল বেজে ওঠে। 

"বাবু, আর কতক্ষণ?"।

"এই আসছি মা"।  আর শুধু কিচি ডাকত; "বাবু"।  আবছায়া ফুঁড়ে ঘুরে দাঁড়ান দীপক চ্যাটার্জী।  

না পাওয়ার রঙ

না পাওয়ার রঙ জড়ো করছিলেন বোধিসত্ত্ব। 
আচমকা মাথায় কী ভূত চাপলো;ভাবলেন যাই,আর একবার ঘুরে আসি। 
না পাওয়ার রঙটুকু কাউকে যদি গছানো যায়।

**
- ভাইটি। 
- আপনি?
- আমি এমনি এমনি।
- আপনি কি হর্লিক্স?
- আমার গান আছে।
- আছে? সুর? কই?
- নাই। তাই না পাওয়ার রং। নেবেন?
- দেবেন?
- নাও তুমি।

--
- দিলেন কই?
- দিলাম তো।
- পেলাম কই?
- পাবে কী করে।না পাওয়া যে।
- ধুস। বড় বেরঙিন।
- ধরে ফেলেছেন।আর চিন্তা নেই।
- না পাওয়া তো।থাকবে কী করে?

--
- যাহ!
- চলি।
- চললেন?
- প্রস্থান।
- ওহ। খেয়ালই করিনি।আপনি মানুষ নন দেখছি।
- নাহ। পোকা।
- জ্বলছেন কই?
- শহর তো। জোনাইয়ের জ্বলুনি নেই।

--
- ওহ! জ্বলুনি নেই। আলো নেই।
- নেই। যা নেই তা পাবেন কেন?
- না পাওয়ার রঙ। আপনি দিলেন।
- আমি?বিলকুল।
- চলি।
- আপনার নামটা...নেই? না পাওয়া?

--
- দিয়ে যাব?সে'টুকু?
- না পাওয়ার স্নেহ সমুদ্রে অল্প পড়ে পাওয়া। বিশ্রী।
- বিশ্রীই তো;বোধিসত্ত্ব।
- বোধিসত্ত্ব পুরুষ নন?
- স্রেফ?নাহ!

Friday, February 26, 2016

মোরন দশা

-   বই?
-   বই।
-   বাব্বা! মিউজিয়াম টিউজিয়ামের বাইরে এ জিনিষ তো সহজে দেখা যায় না।  পেলে কোথা থেকে?
-   জেনিভা থেকে পাঠানো। পাঠিয়েছেন প্রফেসর ভনল্যান্থেন। এ কেতাবে উনিশশো সত্তর বা আশির দশকের ইংরেজি ব্যবহারের চমৎকার সমস্ত নিদর্শন রয়েছে।
-   নাইনটিন সেভেন্টি? বল কী! সাড়ে চারশো বছর আগের বই? দেখে মনে হয় না কিন্তু।
-   কেমব্রিজে একটা কনফারেন্সে আলাপ এই ভনল্যান্থেনের সাথে। আর্ক্‌টিকের সাহিত্যে আমাদের দু’জনেরই সবিশেষ আগ্রহ। সেই থেকে মাঝেসাঝে ভিডিও বার্তালাপ হয়ই।   বার্নে ভদ্রলোকের দাদুর বাড়ির এক কোণে এই বই পড়েছিল। ইংরেজিতে ওনার উৎসাহ বিশেষ নেই। উনি ভাবলেন আমার আগ্রহ থাকতে পারে। তাই পাঠিয়ে দিলেন।
-   বটে! তা বইটা তো দেখছি আদিম ইংরেজিতে লেখা।
-   হ্যাঁ।
-   বিষয়টা কী?
-   নাটক মনে হচ্ছে। সামাজিক প্লট। বিষয়টা সম্ভবত তৎকালীন সমাজব্যবস্থা।
-   কী জানলে? সে’সময়কার সমাজব্যবস্থা সম্বন্ধে?
-   এ ভাষা বড় খটমট। সহজে এগোতে পারছি না। সম্যক বুঝতে সময় লাগবে। তবে যে’টা ইতিমধ্যে ঠাহর করতে পেরেছি সে’টা হল সে সময়কার ভাষা কতটা অদ্ভুত ছিল।
-   হরফ তো একই দেখছি। চেনা শব্দও বেশ রয়েছে। তবু মানে ঠাহর হচ্ছে না।
-   ওই যে বললাম। অদ্ভুত।
-   কী’রকম?
-   এই যেমন ধর আমরা যে বলি “You are a fucking moron”, সে’টাই সেই আদিম ইংরেজিতে কীভাবে বলা হত জানো?
-   কী ভাবে?
-   “I disagree with you”
-   ব্যাস?
-   দ্যাটস অল। “I disagree with you”। এমনকি “You are an imbecile”ও নয়। শুধু “I do not agree with you”।
-   আরিব্বাস! এটুকু বললেই হয়ে যেত তখনকার দিনে?
-   ভাবো। সে আদিম যুগেও অভিব্যক্তির ইকনমি কতটা ছিল।
-   সাঙ্ঘাতিক।
-   আবার যেমন ধর “You are a damned pseudo”, এটাই তখনকার যুগের ইংরেজিতে হয়ে যাবে “I do not understand the meaning of what you have just said”
-   বোঝ! কী কাণ্ড। আর?
-   আর যেমন ধর। “You are a x-tard”, আমরা এমন কথা আজকাল আকছার ব্যবহার করি! অথচ সে’সময়ে কেউ এমন ভাবে বলতই না। তখন বলা হত “I do not like X”
-   এমন হালকা মেজাজে কথাবার্তা! লোককে বোঝানো যেত?
-   যেত বলেই মনে হয়। ভুলে যেওনা না মানুষ তখনও গল্প কবিতা লিখছে। প্রেমে পড়ছে, রাজ্য চালাচ্ছে।
-   অভাবনীয়।
-   অভাবনীয়ই বটে। আসলে অনলাইন সোশ্যাল মিডিয়া এসে ভাষাকে পালটে দিয়েছি; বলা ভালো সমৃদ্ধ করেছিল। শুধু ইংরেজি কেন, সমস্ত ভাষাই ফুলে ফেঁপে উঠেছিল সেই সব সোশ্যাল মিডিয়ায় তর্কের আবহে।
-   মানে একুশ শতকের শুরু দিকে বলছ তো?
-   করেক্ট। ভাষা আর কলেক্টিভ ইমোশনের দিক থেকে সে এক যুগান্তকারী সময়। ইনফ্লেক্সন পয়েন্ট বলতে পারো।
-   নাহ! বইটা নেড়েচেড়ে দেখতেই হচ্ছে।
-   হ্যাঁ। নিশ্চই দেখবে’খন। তার আগে জরুরী কথাটা বলে নিই। বলছিলাম ও পাড়ার নিলু ভৌমিককে চেনা আছে?
-   নগেন হালদারের পাশের বাড়ি? যার বড় ছেলে উকিল আর মেজোছেলে কেমিস্ট?
-   হ্যাঁ। সেই। শুনেছ তিনি কী বলেছেন? দিদি নম্বর ওয়ান অনুষ্ঠান দেখলে নাকি তাঁর বমি আসে।
-   নিলু ভৌমিক বলেছে এ ক’থা? সেক্সিস্ট হারামি। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।
-   চল গিয়ে ওর নাক ভেঙে আসি।
-   কয়েকটা পাঁজরা ভাঙলেও হত না? পাঁজরায় মোচড় দিতে না পারলে মনেই হয় না ডিবেট করছি।
-   বেশ। সে হবে’খন। চল। নগেনবাবুর সঙ্গে ডিবেটটা সেরে আসি। আমি হকিস্টিক নিয়ে নিচ্ছি। তুমি বরং তোমার ব্লেডটা নিয়ে নিয়ো। হারামজাদার কী সাহস! দিদি নম্বর ওয়ান নিয়ে কথা। কই! দাদাগিরি বেলায় তো কিছুতে কিছু না! সেক্স-স্টার্ভড হারামি কোথাকার। চলো তুরন্ত। 

খতরামোহন ও করমচাঁদ


- বল্লম সিং! অ্যাই বল্লম সিং! এত রাত্রে এত হাঁকডাক কেন?
- কোটাল সাহেব! কয়েদীরা উল্লাস আরম্ভ করেছে।
- উল্লাস?
- উল্লাস।
- কাল শূলে চড়বে আর আজ ফুর্তি? ভয়ে পাগল হয়ে গেছে নাকি?
- ওদের নেতা করমচাঁদ। সে বললে, শূলেই নাকি মুক্তি। বিপ্লব সার্থক।
- বটে? শূলে মুক্তি? ব্যাটাচ্ছেলের বাড় বেড়েছে বড়! আচ্ছা! আমিও কোটাল খতরা মোহন। বল্লম সিং!
- আজ্ঞে কোটাল সাহেব। 
- করমচাঁদকে বলে দাও। তার ও তার স্যাঙাতদের শূলে চড়ার রদ হয়ে গেছে। 
- সে কী! দেশদ্রোহী। ওদের মারবেন না?
- মারব! মারবই। না মারলে হাড় জুড়োবে ভেবেছ? তবে ঘ্যাচাং করে শূলে চাপালে দেখছি চড়ুইভাতি হয়ে যাবে। শূল ক্যান্সেল। ওদের অন্যভাবে তড়পে মারব। 
- আগুন?
- নাহ! জ্বালায় ওদের বড় সুখ। 
- পাহাড় থেকে ঠেকে ফেলে দেওয়া?
- হারামজাদাদের যত নামাবে, তারা তত উঠবে।
- তবে কোটাল সাহেব? কী করে মারবেন?
- বিষ। 
- ফলিডল? 
- নাহ! তার চেয়েও সাংঘাতিক। 
- কেউটের খাঁচা?
- নাহ নাহ! তাতে যন্ত্রণা যথেষ্ট নয়। 
- তবে? কোন বিষ কোটাল সাহেব?
- সিস্টেম। সিস্টেম।   

Thursday, February 25, 2016

তেত্রিশ নম্বর সিঁড়ি

মহামুশকিল। রোজ বত্রিশটা সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদে উঠে আসা। রোজ। রাতের খাওয়ার ঠিক আধ ঘণ্টা বাদে। নিয়ম করে। উইদাউট ফেল্‌।
মাংসের বাটি থেকে উঁকি মারা থ্যাবড়া মুখো আলুর মত চেনা এই রুট। বত্রিশ নম্বর সিঁড়ি টপকালেই ছাদের খড়খড়ে মেঝে। নিয়ম। স্যাটার্নের রোটেশন আর মারাকারির রিভোলিউশনের মত। অমোঘ।
এদিকে ব্যাপার অতি সামান্যই। নলি হাড়টা সড়াৎ করে শুষে নিতে গিয়েই ধড়াস করে হৃৎপিণ্ডটা গেল আটকে। ঠিক হ্যায়। অসুবিধে নেই। টেবিলে নিজের এঁটো হাতের মড়াকে রেখে উঠে আসতে হল। এই যা। এ আর এমন কী? দুমাদুম মানুষ মরছে, তাতে কার কী?বিশেষ করে সিঁড়িদের কিছু আসা যাওয়া উচিৎ নয়।
খোশমেজাজে দুদ্দাড়িয়ে তরতর করে উঠে যাচ্ছিলাম। খামোখা এই তেত্রিশ নম্বর সিঁড়িতে পা পড়ায় মনটা গেল বেজায় খারাপ হয়ে। এ'সব কী? এ'সব কেন? মারা গেলাম; দ্যাট ইজ ওকে। কিন্তু তাই বলে ছাদের মুখে বাড়তি সিঁড়ি? আচমকার মৃত্যুর ওপর বিরক্তি এলো। তেত্রিশ নম্বর সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে পড়তেই হল। পার্লামেন্ট-ফেন্ট ভেবে মনে স্ফূর্তি আনার চেষ্টা করলাম। লাভ হল না। তবে দেখলাম ভূত হয়েও থুঁতনি চুলকানোয় বাঁধা নেই।
কে দিলে এই সিঁড়ি? এর পরে কি তবে ছাদ না চৌত্রিশ নম্বর সিঁড়ি এসে দাঁড়িয়ে গেছে? সিঁড়ি বাড়ছে কেন? তউবা তউবা। ঠিক এই মুহূর্তে একটা বড় আবিষ্কার হল। (ভূতদের জগতে আবিষ্কারকদের কদর কতটা? ভেবে লাভ নেই)। তেত্রিশ নম্বর সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে টের পেলাম ভূতেরা গাঁট্টা খেতে রীতিমত সক্ষম। - বাবু! - বিন্তি তুই? - নয়তো কি আমার ভূত? - হুঁ? - আরে ঠাট্টা ঠাট্টা। ভূতই তো। - কবে হল?
- বিন্তি। মনে পড়ে? ক্লাস ইলেভেন বোধ হয়। বাবু ও পাশে কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ও ছাতেতে বিন্তি বসে আমার বিশ্বাস। বিন্তি ওপারে বসি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে; কহে, বাবু ব্যাটা ল্যাদিছে ওপারে।
- দু'বছর। ক্যানসার। - আমি দু'মিনিট। নলি হাড়। - বাবু। - হুঁ। - কেমন আছিস? - বিন্তি। ভালো রে। কপাল দেখ। গতকালই শেষ হয়েছে। শরদিন্দু। - বাবু। - আজ আমি শেষ হলাম। - বাবু। বিয়ে করবি? - বিন্তি। - আজও বাঁধা বাবু? - হি হি। - বিন্তি। তোদের ছাতের ডালিয়া। ছাতের পাঁচিলে আচারের বয়াম। - তোদের ছাতে রাখা আধ ভাঙা চেয়ারখানা। - বিকেল ছিল তখন। - বিকেল। রেডিও। অ্যান্টেনা। - বিন্তি। - বাবু।
- ঝামেলা বলে ঝামেলা? ভয়ের চোটে আর সিঁড়ি ভাঙ্গিনি। যদি এর পরেও ছাদ না থাকে বাবু? যদি চোদ্দ নম্বর সিঁড়ি এসে মাতব্বরি করে? আবার ছাতের মায়া বড় মায়া রে। প্রাণে ধরে নেমেও যেতে পারিনি।
- শাদি করেগা? - ভাগ। ভূতের বিয়ে! ভাগ্যিস তেরো নম্বর সিঁড়িতে এসে পড়লি। তাই না দেখা হল? - তেরো? বলিস কী! এ তো তেত্রিশ নম্বর সিঁড়ি। - না। আমি তো তেরো নম্বরের সিঁড়িতে আটকে। সেই দু'বছর থেকে। সে বড় বিশ্রী ব্যাপার। ছোটবেলা থেকে জানি, বারো নম্বর সিঁড়ি পেরোলেই ছাদ। শ্যাওলার গন্ধ। কিন্তু দেখ কাণ্ড। এসে পড়লাম তেরো নম্বর সিঁড়িতে। - কী সাঙ্ঘাতিক ঝামেলা।
- উপায় নেই। করতেই হবে। বেঁচে থাকতে বিয়ের পিঁড়ি কোইনসাইড করানো গেল না যখন, দুই মড়ায় মিলে বিয়ের সিঁড়িটা রিফিউজ করার মানেই হয় না।
- বিন্তি রে। আমি ভাবছিলাম এটা তেত্রিশ নম্বর সিঁড়ি। বত্রিশটা সিঁড়ি পেরিয়ে রোজ ছাতে উঠি। আজ ছাদ পেলাম না। পেলাম নতুন সিঁড়ি। - কী কাণ্ড! - সিঁড়ি মিশে গেছে। - লাও ঠ্যালা। - লাও ঠ্যালা। - বাবু। বিয়ে করবি? - বিয়েতে বড় ঝামেলা রে।
- করবি না?

বাবু যুধিষ্ঠির


- অ্যাই। অ্যাই। চললেন কোথায় মশাই? চললেন কোথায়?
- না মানে। হাতঘড়িটা বন্ধ হয়ে গেস্‌ল কিনা। জাস্ট খেয়াল করিনি। একটা জরুরী মিটিং আছে বুঝলেন। এখুনি না বেরোলে কোন উপায় দেখছি না। 
- ইয়ার্কি হচ্ছে? চারটে মড়া পড়ে রইল। আমার পিপাসা মিটল না। বাতেলা ঝাড়ার সময় তো আকাশ উপড়ে খাওয়ার তাল করছিলেন। বাবা! সে কী তম্বি। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জল খেলে মারা যেতে হবে। কত লেকচার মাইরি। কত কেতা! হাজার গণ্ডা সওয়াল ফ্লায়িং ডিস্কের মত ছুঁড়ে দিয়ে তারপর আবার নতুন র‍্যালা; সব ভাইকে বাঁচিয়ে দেব। বলি এ'সব কী? এরা এখনও ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে আছে তো! 
- না না। বুঝতে পারছেন না। এক কেমিক্যাল মেশাতে অন্য কেমিক্যাল মিশিয়ে দিয়েছি জলে। কাজেই অ্যান্টিডোটটা কাজ করছে না। তাই বলছিলাম, জলটা আপনিও না খেলেই ভালো।
- সর্বনাশ। কী ফেরেব্বাজ লোক মশাই আপনি।
- আরে। তাই বলে জামা ধরে টানবেন? এই আপনি ধর্মরাজ?
- এ'সব ফালতু কথা ছাড়ুন! ভীম অর্জুন না থাকলে ধর্মকে প্রটেক্ট করবে কে? গেল গেল সব গেল। 
- ইয়ে জামাটা ছাড়ুন। মিটিং আছে, মাইরি। 
- তবে রে রাস্কেল?
- যুধিষ্ঠিরের মুখে খিস্তি?
- কাঁচাগুলো তো থলে থেকে বার করিনি এখনও। এদের না বাঁচালে রক্ষে নেই আপনার। এই বলে দিলাম।
- আহ! কী মুশকিল। বললাম তো। ভুল কেমিক্যাল মেশানো হয়ে গেছে। ল্যাবরটেরি থেকে ভুল মাল পাঠিয়েছে নিশ্চই। ব্যাচেও গড়বড় হতে পারে। আমার কিছু করার নেই। ফিরে গিয়েই একটা কড়া করে কমপ্লেইন লেটার লিখে দেব'খন। 
- কিছু করার নেই মানে? নিজের বাবাকে বলো এ'সব কথা।
- পাণ্ডু পুত্রের বাপ তুলে খিস্তি দেওয়ার রিস্ক নেওয়াই উচিৎ না। 
- মুখ সামলে মুখ সামলে। 
- শুনুন। শুনুন। আমায় খিস্তি করে কী হবে? কলার না হয় ধরলেন, ক্যালাতে পারবেন? পারবেন না। আপনি ভীম নন। কথায় চাবকাতে পারবেন? পারবেন না। আপনি কেষ্টা নন। আর এদিকে যা কেস; বিশেষ কিছু করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে একটা চেষ্টা করে দেখতে পারেন। 
- কী?
- কাস্টোমার কেয়ারে কল করে বলুন কী ঘটেছে। টোল ফ্রি। 
- লাভ হবে?
- হবে না। তবু। মন হালকা হবে। 
- গেল গেল সব জলে গেল। 
- কী?
- সব। রাজ্য। পয়সাকড়ি। সব। এবার ঐ দুর্যোধন হারামজাদা ব্যসবাবুকে গ্রিপে নিয়ে নিজের পয়েন্ট অফ ভিউ ফলিয়ে মহাভারত লেখাবে। আমার ক্ষমতা থাকলে আপনাকে আমি খুন করতাম এখন। 
- ক্ষমতা আছে?
- দম থাকে তো জাস্ট ভীমকে জাগিয়ে দিন। কার কত ক্ষমতা দেখিয়ে দেব। 
- থাক। খুব হয়েছে। আচ্ছা, এবার আমি আসি?
- হায় হায়। এ ব্যাটা সব মাটি করলে। আমায় পথে বসালে। রাজা হয়ে পাশবালিশ আঁকড়ে জুয়া খেলে দিন কাটাব, সে আর এ জন্মে হল না।  
- মশায় । ভেবে দেখুন। ক্ষতি কি সত্যিই হয়েছে?
- ফের প্রশ্ন? জুতিয়ে দাঁত ভেঙ্গে দেব! গাম্বাট কোথাকার। 
- আহ! চটছেন কেন? ভেবেই দেখুন না। ক্ষতি হয়েছি কি?
- হয়নি? ভাই গেল। রাজ্য গেল।
- তাতে কী?
- তাতে কী? ব্যাটাচ্ছেলে সব ভাসিয়ে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তাতে কী?
- সব ভেসে গেছে?
- যায়নি আবার? অমন পেল্লায় ভীম, অমন ধারাল অর্জুন, অমন আর্দালি নকুল, অমন পিওন সহদেব। আহা। বড় দুঃখ গো। অমন রাজকোষ। আহা, বুক ফেটে যাচ্ছে জাস্ট। 
- এটুকুই সব? এ লিস্টের বাইরে আর কেউ নেই?
- হুম?
- আর কেউ নেই?
- না মানে...।
- মানে?
- আছে। মানে ওই আর কী!
- ওই আর কে?
- পানু। 
- পানু? 
- পাঞ্চালী। এটা বেডরুমের ডাকনাম। 
- তাই বলে পানু?
- মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে। আহা। বড় ভালো মেয়ে। অর্জুন এই একটা কাজের কাজ করেছে। আহা। বড় ভালো মেয়ে। 
- ভালো লাগে? পানুকে?
- এই। বৌদি বলুন। 
- সরি। বৌদিকে ভালো লাগে?
- আমি ও-অন্ত প্রাণ। আহা। এত নরম। এত কোমল। এত ভালোবাসার। এত...।
- বুঝেছি। বুঝেছি। আর এলাবোরেট করতে হবে না। তা, এখনও মনে হচ্ছে সব মাটি?
- নাহ! মানে...আসলে...। 
- আসলে...?
- অর্জুন ভীম বড় বেশি ডিস্ট্র্যাক্ট করত ওকে জানেন। আর নকুল সহদেব কন্সট্যান্ট ঘ্যানরঘ্যানর। চাট্টি সুখ দুঃখের কথা যে বলব...। সময়ই পেতাম না। 
- রাজ্য চাই?
- রাজ্য কে? 
- ভাই?
- জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে। 
- তাই তো। তবে আপনি বললে নতুন অ্যান্টিডোটের একটা চেষ্টা করতে পারি। 
- আপনার কী একটা মিটিং ছিল বলছেন? এই দ্যাখো। আপনার জামা খামচে দাঁড়িয়ে আছি তখন থেকে। নার্ভাস হলে আমার আবার ইয়ে থাকে না। বিশ্রী। গেল তো ইস্তিরি নষ্ট হয়ে? যাক। এবার বেলা থাকতে বেড়িয়ে পড়ুন দেখি। অন্ধকার হলে আবার বড় অসুবিধে। এদিকে দিনকাল যা পড়েছে।
- আসি তবে?
- দুগ্‌গা দুগ্‌গা! 

Wednesday, February 24, 2016

ভূতের গল্প

ভূতের গল্প ১:

যে আদত তান্ত্রিক; তার কলজে খুন করতে ডরায় না, ভূত ধরে চিবিয়ে খেতেও নয়।
এই তো সে'বার। বলা নেই কওয়া নেই হাফ ডজন রসগোল্লাকে প্লাস্টিকের টিফিন বাক্সে করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলেন তারক তান্ত্রিক।
তার ঠিক ছ'দিনের মাথায় তিন জোড়া ভূতের ছিবড়ে চিবিয়ে খেলেন তারক।

ভূতের গল্প ২ -

সেক্রেটারি নীলাকে চুমু খেতে গিয়ে দাঁত কপাটি লাগার জোগাড় হল শ্যামল দত্তর।
"ভূ....ভূ....ভূ....ভূত"!!!!!
নীলা ভেবড়ে গিয়ে পিছন ফিরে দেখলে দরজা আলো করে মিসেস দত্ত দাঁড়িয়ে। চোখে আগুন, কপালে শীরার টনটন।
গলা শুকিয়ে গেছিল নীলার।
" আ...আপনার মিসেস...মা...মা...মারা গেছেন নাকি স্যার...দরজায়...ও...ও'টা আত্মা?"
কুঁইকুঁই করে শ্যামল দত্ত সারেন্ডার করলেন;
"আত্মা হলে কী আর ভূতের ভয় হত? ওঝা আছে। ওঝার বাপ আছে। এ যে জ্যান্ত গিন্নী। জ্যান্ত! ওঝালেস!!....আ...আ...আ"!!!

যদিদং

- ইলোপ-টিলোপ তো ঠিক আছে। কিন্তু যদিদং টদিদংটুকু বলবে না?
- হোয়াই নট? যদিদং হৃদয়ং...।
- এ মা! যজ্ঞের আগুন কই?
- অগ্নিসাক্ষী রেখে বলতে হবে?
- নয়তো স্যাঙ্কটিটি থাকবে কেন? জ্বালাও।
- সিগারেট আছে। চলবে? লাইটারটা যে দরকারের সময় কোথায় যায়...।


**
সিগারেট ধরালেন বিপ্লব। মনটা বড় অগোছালো হয়ে যাচ্ছিল বারবার।
নাহ। 
ক্ষমতায় কুলোবে না। বড্ড বেশি মধ্যবিত্ততা ঢুকে গেছে বুকপকেটে, অফিসের ব্যাগে, মানিব্যাগে,ধমনীতে। মিতা কলকাতার স্মার্ট মেয়ে, আধুনিক পরিবার। ওর সাহসের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলবে মেদিনীপুরের একটা ছেলে? ধুস। ট্যাক্সি ঘুরিয়ে নিতে বলে মিতার মোবাইলে একটা ফোন করলে সে।


**
"আজ থাক। যদি ঢং বল তাহলে তাই। আজ থাক"।

বাওয়ালি জাতি



...রেখেছ বাওয়ালি মোডে,
মানুষ করনি।



- আর একটা পেগ। না বোলো না। ওয়ান ফর দ্য রোড ভাইটি। 

- আহ! আর কেন?
- জমবে না নয়তো। বিজ্ঞাপনে দেখনি? ইট ইজ ইওর লাইফ, মেক ইট লার্জ! 
- বটে?
- লার্জার দ্য পেগ, গ্রেটার দ্য নেশা; লার্জার ইজ ইওর লাইফ।
- নাহ! এ'সবে কেমিক্যালে আমার নেশা জমে না হে। আমার নেশা অন্য, আর সেখানে স্মল সাইজ লার্জ সাইজ চলে না।
- অন্য নেশা? স্মল লার্জ সাইজের বালাই নেই?
- টেবিল চাপড়ানো বাঙালি ভাই। আমার নেশা স্রেফ থিনঅ্যারারুট ভেজানো চায়ের কাপে। আর সেখানে স্মল সাইজ, লার্জ সাইজ, এক্সট্রা লার্জ সাইজ; সব একটাতেই। 
- সে'টা কী?
- ক্রিটিসাইজ

৩। 

- ভয়েড। ভয়েড।
- কী ভয়েড?
- এই ক'দিন। কম্পলিট ভয়েড।
- বৌদি বাপের বাড়ি?
- নাহ!
- তাহলে?
- নলেনের সিজন শেষ। হিমসাগরের সিজন ধারে কাছে নেই। ভয়েড। ভয়েড।

ডাঁটাশঙ্কর, বামাপ্রসাদ ও বৃষ্টি



বামপন্থী বামাপ্রসাদ গরমে বড় কষ্ট পাচ্ছিলেন।তাই বললেন "উফ, কী গরম। কী বীভৎস গরম, ফেব্রুয়ারিতেই কী গরম"।
ডানপন্থী ডাঁটাশঙ্কর প্রতিবাদ করলেন : "গরম আছে। কষ্ট আছে। তবে শালা তুমি চিটচিটে বল কোন সাহসে? স্পষ্ট মালুম হচ্ছে প্যাচপ্যাচে গরম। স্পষ্ট"।
বামাপ্রসাদঃ "হারামি কি আর সাধে বলি? প্যাচপ্যাচ আবার কি? গায়ে বিটুমিন ঢালছ নাকি হে?"।
ডাঁটাশঙ্করঃ "বিটুমিন?"
বামাপ্রসাদঃ "ওহ। তুমি তো আবার সংস্কৃতে না বললে বুঝবে না। বিটুমিন মানে আলকাতরম্‌"।
ডাঁটাশঙ্করঃ "অ। বুঝেছি। এ দেশী গরমের আলকাতরা তো আবার তোমার অনুভব করা বারণ। চিনের আলকাতরা তোমার আলকাতরা"।
বামাপ্রসাদঃ "চিন তুলে কথা বলেছ কি লকআউট করব...রিভোলিউশনে ডরাই ভেবেছিস?"।
ডাঁটাশঙ্করঃ "তুই তোকারি? কাস্ত্রো শিখিয়েছে? গোমূত্রের সুইমিং পুলে বাটারফ্লাই স্ট্রোক ঝেড়েও মুক্তি পাবি ভেবেছিস?"।
বামাপ্রসাদঃ "এই হয়েছে এক রোগ। তর্কে ল্যাজেগোবরে হলেই গীতার নামে হাবিজাবি কোট? বলি গীতা কি রুমি না কালাম? অবশ্য ল্যাজ গোবরে ঠেকলে সে'টা তো প্লেজার, তাই না?"।
ডাঁটাশঙ্করঃ অ্যাই, কে কোথায় আছিস ত্রিশূল বের কর। জং ধরেছে? কোই বাত নেহি। ফটোশপ কই? ফটোশপ?
বামাপ্রসাদঃ তবে রে? বিপ্লবের জন্য মরতে হেসিটেট করব ভেবেছিস? অ্যাই, ম্যানিফেস্টো আন ভাইটি। আর ওজনদার বইটইগুলো। কী? পড়া হয়নি? খুললেই ঘুম পায়? ধুর! পড়তে কে চাইছে। এদিকে দিয়ে যা, মালগুলোকে তাক করে ছুঁড়ে মারি।
জাবালি আকাশের এক কোণে আধশোয়া হয়ে টুথপিক দিয়ে দাঁতের ফাঁক থেকে কষানো পাঁঠার রোঁয়া বার করতে ব্যস্ত ছিলেন। চিটচিট প্যাচপ্যাচে বিরক্ত হয়ে হোসপাইপ নিয়ে কলকাতা তাক করে ঝেড়ে দিলেন।
ডাঁটাশঙ্কর, বামাপ্রসাদ আরাম পেলেন। কিন্তু চিটচিট প্যাচপ্যাচ গায়েব হয়ে যাওয়ায় ঝগড়াটা নেতিয়ে গেল। তা'তে দু'জনেই আন্তরিক মন খারাপের শিকার হয়ে খুচরো হাতে অটোর লাইনে দাঁড়ালেন।

Tuesday, February 23, 2016

উত্তম মধ্যম

-          গরমটা কেমন ঝুপ করে পড়ে গেল দেখেছেন?
-          হুম। তাই তো।
-          সবে তো ফেব্রুয়ারি। তাতেই রেগুলেটর চারে না দিলেই দরদর করে ঘাম।
-          ঠিক। চিন্তার ব্যাপার।
-          গ্লোবাল ওয়ার্মিং। বুঝলেন?
-          হুম। আচ্ছা সামন্তদা, বার্ন্স অ্যান্ড মারের বিলগুলো প্রসেস হয়েছে?
-          আর বার্ন্স! সবে বিলগুলো নিয়ে বসেছি। লাঞ্চের পর। অমনি বড়বাবু এসে অমুক কনসাইনমেন্ট তমুক কনসাইনমেন্ট করে এমন ব্যতিব্যস্ত করে তুললে না! টুথপিক আছে?
-          না।
-          সেফটিপিন?
-          ইয়ে। না।
-          দাঁতে সোয়াবিনের রোঁয়া ঢুকে গেছে। তখন থেকে অস্বস্তি হচ্ছে।
-          দু’বার তাগাদা পড়ে গেছে ইতিমধ্যেই।
-          তাদের অফিস থেকে ফোন করেছিলে?
-          না। তারা এখনও করেনি। উত্তমবাবু জানতে চাইছিলেন।
-          আর এই হয়েছেন এক উত্তমবাবু। বার্ন্স অ্যান্ড মারের প্রতি ওনার যে এত কীসের পিরিত।
-          অ্যাকাউন্টটা উনিই সার্ভিস করেন তো। তাই হয়তো...।
-          এতটা নাইভ হয়ে যে আপনি কী করে সার্ভাইভ করছেন মিস্টার মুন্সী।
-          নাইভ?
-          ভীষণ। আরে মশাই এই উত্তম দত্ত কি একটা অ্যাকাউন্ট সামলাচ্ছে? কই, কোনদিন দেখেছেন শ্যামা ট্রেডার্স বা গুজরালের হয়ে দু’টো কথা বলতে এসেছে।
-          বার্ন্স অ্যান্ড মারে বড় মাছ বোধ হয়। বড় বিজনেস।
-          রাখুন মশাই বড় বিজনেস। সাধে আপনাকে নাইভ বলি? শুনুন। এই মাছ ফাছ কিচ্ছু নয়। বার্ন্স অ্যান্ড মারে হচ্ছে হাঁস।
-          হাঁস?
-          ওই উত্তম দত্তের সোনার হাঁস। বার্ন্স অ্যান্ড মারে মাসে একটা করে সোনার ডিম এনভেলপে করে ওই উত্তমবাবুর ড্রয়ার পর্যন্ত পৌঁছে দেন।
-          সে’টা আপনি দেখেছেন?
-          ধুর মশাই। সব কি আর দেখে বুঝতে হয়? এ ইন্ডাস্ট্রিতে সাতাশ বছর শুধু তো ঘাস সেদ্ধ করে কাটাইনি। ফিশি ব্যাপার সেন্স করতে পারি।
-          ও। তবু। এবারে ওদের বিলগুলো সত্যিই অনেকদিন দেরী হল প্রসেসিংয়ে।
-          কী এমন দেরী?
-          না মানে, তিরিশ দিনের ইন্টারেস্ট ফ্রি ক্রেডিট। তারপর সাড়ে সাত পারসেন্টে ইন্টারেস্ট চার্জ করার কথা। তেত্রিশ দিন হয়ে গেছে।
-          আজকের আনন্দবাজারে দেখলাম পাঁচ লাখে তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট। ইয়াব্বড় বড় অক্ষরে বিজ্ঞাপন। খুঁটিয়ে পড়ে জানলাম আসল কাণ্ডটা। ওটা হচ্ছে জাস্ট ডাউন পেমেন্ট। কেমন ধড়িবাজ বিজ্ঞাপন বলুন!
-          যা যুগ পড়েছে। সত্যিই তো। ধড়িবাজই।
-          তাই তো বলছি। ফেরেব্বাজির যুগ। একটু আলগা দিয়েছেন কি কেউ পকেটে ছুঁচো ছেড়ে দিয়ে ফুর্তি দেখবে।
-          বার্ন্সের বিলগুলো যদি...।
-          ও নিয়ে চিন্তা কীসের। বার্ন্সের সজলবাবুর মাই ডিয়ার মানুষ। ও আমি বলে দেব’খন।
-          না মানে। উত্তমবাবু যদি বড়সাহেবকে কমপ্লেইন করে দেন। ওই বিলগুলো কিন্তু দু’হপ্তা ধরে পড়ে রয়েছে।
-          কদ্দিন হল?
-          আজ্ঞে?
-          এ চাকরীতে কদ্দিন হল?
-          পাঁচ বছর। ইয়ে। বিলগুলো একটু যদি চোখ বুলিয়ে সার্টিফাই করে দেন সামন্তবাবু। আমি না হয় পাঞ্চ করে দিচ্ছি। পনেরো মিনিটের বেশি লাগবে না।
-          মশাই। পনেরো মিনিটকে অমন খাটো করে দেখতে নেই। ওইটুকু সময়ের মধ্যেই আলোর রশ্মি সূর্য থেকে দু’বার পৃথিবীতে আব্বুলিশ করে চলে যাবে। কাল থেকে ভাবছি টুথপিকের ডিবেটা অফিসে নিয়ে আসব বুঝলেন?  
-          বিলগুলো...।
-          অনাবিল বিকেলটা চিনতে শিখুন। চাট্টি মুড়ি বেগুনী আনান। কমলকে তো আপনারা ফাইল বইয়েই খতম করে দিলেন। বেচারি বলছিল ওয়ার্ক প্রোফাইলে নিয়ে সে বেশ অসন্তুষ্ট। তাই বলছিলাম, ওকে দিয়ে মাঝে মাঝে মুড়ি বেগুনী আনান। ও এনগেজ্‌ড ফিল করবে। আপনারও বিকেল হলেই বিল বিল বাতিকটা যাবে।      
-          বড়সাহেব কিন্তু...।
-          ওহ্‌ হো। বড়সাহেবের কথায় মনে পড়ল। আপনাকে ভাই আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।
-          কী কাজ সামন্তবাবু?
-          আমার একটু তাড়াতাড়ি বেরোবার আছে। গিন্নী সিনেমা দেখতে চাইছে। উইকেন্ডে আবার টিকিটের দাম বেশি। তাই ভাবলাম। কিন্তু ইয়ে। দু’ঘণ্টা আগে বেরোনোর না করলেই সাহেবের আবার মুখভার হয়ে যায় কী না।
-          না মানে, আমি কী করব?
-          আমি বেরোবার পর ওনার চেম্বারে গিয়ে মুখ কালো করে জানিয়ে আসবেন যে আমার বনবন করে মাথা ঘুরছিল। ভার্টিগো গোছের কিছু। আপনি আমায় কোন রকমে ট্যাক্সিতে বসিয়ে বিদেয় করেছেন। দেখবেন গুলিয়ে ফেলবেন না যেন।
-          ওহ। আচ্ছা। বিলগুলো তবে...।
-          বার্ন্স বাবাজীকে চোরাগোপ্তা একটু খবর চালান করে দিন এবার।
-          খবর চালান?
-          শুধু কনসাইনমেন্ট পাঠিয়ে হদ্দ হলে হবে?
-          কী খবর?
-          যে আমরা মধ্যম হতে পারি। অধম বললেও আপত্তি নেই। তবে সোনালি কুসুম রাঙা বিটনুন গোলমরিচ ছড়ানো পোচ প্লেট থেকে চেটে খেতে আমরাও ভালোবাসি। ডেফিনিটলি ভালোবাসি।
-          পোচ?
-          চলি। পাঁচটার শো। আবার ওদিকে গিন্নী একা নয়, সাথে শ্যালিকাটিও আছে। আর ভায়রা। সময় মত না পৌঁছুতে পারলে কান কাটা যাবে যে।