Friday, October 2, 2015

সিদ্ধার্থ

- সারথি, রোক্কে! রোক্কে!

- কী ব্যাপার যুবরাজ? আবার দাঁড়ানোর কী দরকার? মহারাজ প্রাসাদে ফেরার আগেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। নয়তো আবার হইচই  বাঁধবে।

- তুমি এত ভয় পাও কেন সারথি? আমি যুবরাজ সিদ্ধার্থ তোমায় অভয় দিচ্ছি, তা সত্ত্বেও এত ঘ্যানঘ্যান কর কেন?

- বেশ। দাঁড়ালাম। তা এখানে দাঁড়িয়ে কী হবে? 

- হুই দেখ।

- হুই? কই?

- হুই যে। ওই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। 

- ও? ও তো রামনরেশের খোকা। 

- রামনরেশের খোকা?

- আজ্ঞে।

- এই বিকেলে মাঠের ধারে ও অমন একা দাঁড়িয়ে কী করছে? ও বাকি খোকাদের সঙ্গে খেলছে না কেন? ওর হাতে কী ও'টা?

- হাতে? পুঁথি। 

- পুঁথি?

- আজ্ঞে পড়াশোনা করছে। গুরুমশায় টোলে বাড়তি পড়া দিয়েছে হয়তো। রামনরেশের এই খোকা তো আবার পড়াশোনায় দারুণ কী না। তাই। পড়াশোনা ছাড়া আর কোন কিছুতে তার মন বসে না। এ বয়েসেই কত কিছু জানে।

- খোকা এত জানে যে বিকেলে খেলে না? 

- আজ্ঞে না। পড়ে। যত বেশি পড়ে তত বেশি জানে। বাকি খোকাদের তুলনায় তত বেশি এগিয়ে যায়।  গুরুমশাই তার কত প্রশংসা করেন সর্বক্ষণ।

- সে কী! এ যে কচি বয়েসেই এ খোকা বুড়িয়ে থুত্থুড়ে হয়ে গেছে গো। হায় হায়। বুকের ভেতরটা যে দুঃখে হুহু করছে সারথি।

- দুঃখে কাজ নেই যুবরাজ। এগোনো যাক।


**

- সারথি। সারথি। রোক্কে। রোক্কে। 

- আবার কী হল?

- ওই দেখ। 

- কী দেখব?

- ওই যে! ওই বাড়ির দাওয়ায় বসে ওই বাচ্চা ছেলেটা কেমন আর্তনাদ করছে। বাছার কোন গম্ভীর ব্যামো হয়েছে বোধ হয়। কী কাণ্ড। 

- প্রাসাদের বাইরে তো আর বেরোন না। কোন খবরও রাখেন না। প্রতিযোগিতার  যুগ যুবরাজ।

- প্রতিযোগিতা? কাদের মধ্যে?

- প্রত্যেক খোকা খুকীর তার সমস্ত প্রতিবেশীর সঙ্গে। সর্ব ঘটে সর্বাঙ্গ সুন্দর কাঁঠালি কলা না হতে পারলেই চিত্তির। শুধু পুঁথি-পাঠে এগিয়ে থাকলে চলবে না। গীতবাদ্য নৃত্য অঙ্কন; যাবতীয় শিল্পে পারদর্শী না হতে পারলে যে পিতা মাতার নাক কাটা যায় যুবরাজ। ওই খোকা আর্তনাদ করছে না; ও সঙ্গীতের রেওয়াজ করছে। বেচারার কি না গলায় সুর নেই; তাই ওর গান আর্তনাদের মত শোনাচ্ছে।

- বল কী? গলায় সুর নেই তবে গান করছে কেন?

- প্রতিবেশীর পো রাগসঙ্গীতে পারদর্শী যে, কাজেই ওর গলায় সুর আছে কী নেই কী এসে গেল তাতে। ও গান না শিখলে বাপ মায়ের যে মাথা কাটা যাবে যুবরাজ।

- সর্বনাশ! যাক গে। তাড়াতাড়ি রথ এগিয়ে নিয়ে চল হে। এ যন্ত্রণার সুর শোনা দায়। ও খোকা অসুস্থ। নয়তো অমন বেখাপ্পা ভাবে গান কেউ গাইতে পারে? জলদি রথ আগে লো! 


** 

- সারথি! রোক্কে! রোক্কে! রোক্কে!

- আপনি কী আজ ঘরে ফিরবেন না? মহারাজ জানতে পারলে...। 

- কথায় কথায় মহারাজ মহারাজ কর কেন সারথি? আগে বল ওই ছেলেটা। ওই যে...। 

- কই। 

- ওই যে। বাসন মাজে। বছর পাঁচ সাতেকের বেশী বয়স বলে তো বোধ হয় না। অত কচি খোকা বাসন মাজছে কেন সারথি? এই বিকেলে না খেলে, না পড়ে, না গান গেয়ে; ও বাসন মাজছে কেন গো?

- যুবরাজ। ওর বাপ মা নেই। দোকানে বাসন মেজে দু'বেলা দু'মুঠো খেতে পারে। ওর আবার পড়াশোনা আর খেলা! 

- এ খোকা যেন একটা জ্যান্ত মৃতদেহ সারথি।

- দুঃখ করে লাভ নেই যুবরাজ। যার কপালে যে'রকম। বরং চলুন এগোই। প্রাসাদে ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। 

**

- সারথি! 

- ফের রথ দাঁড় করাতে হবে যুবরাজ?

- না, দাঁড় করিও না। তবে ও কে যায়? ওই পথে?

- ও ভবা বেলুনওলা!  এক সময় বেলুন বেচে ভালোই আয় ছিল। বিকেলে অল্প সময়ের মধ্যেই ওর সমস্ত বেলুন বিক্রি হয়ে যেত। কিন্তু এখন আর খোকা খুকিদের সময় নেই ওর বেলুন কেনার। তাই ভবা আজকাল খামারে কাজ করে। তবে বেলুন বেচাটা ওর ভালোবাসা কিনা। তাই রোজ বিকেলে এখনও বেলুন হাতে বেরোয়। পাগলের মত খুঁজে বেড়ায় বেলুন কেনার জন্য কোন কচিকাঁচা আছে কী না।

- কেউ কেনে না, তাই না?

- কেউ না যুবরাজ। আপনি নেবেন? বেলুন? রাহুলের জন্য?

- হুঁ?

- বেলুন কিনবেন ? রাহুলের জন্য?

- হেঃ, না! তবে বেলুন বিক্রি করতে মন চাইছে সারথি।

- মহারাজ শুদ্ধোদনের পুত্র যুবরাজ সিদ্ধার্থ বেলুন বিক্রি করবেন? হেঃ হেঃ!

- হেঃ হেঃ।

5 comments:

ঋজু গাঙ্গুলী said...

কাঁপালে গুরু!

Dipanjan Patranavis said...

Oshadharon, just oshadharon

আরাফ করিম said...

অনেক্ষন ধরে নেটে ঘুরছিলাম, একটা ভালো লেখা পড়ব বলে। পড়ে ফেললাম।

malabika said...

আইডিয়াটা খুব ভাল। ভাগ্যিস সিদ্ধার্থ এযুগে জন্মান নি। তাই এত হাই হাই চিন্তা করতে পেরেছিলেন আজ হলে আর বৌদ্ধ ধর্ম তৈরি হত না বোধহয়।

Anonymous said...

সাধারণ ঘটনা অসাধারণ হলো শুধু দেখাবার গুণে। সাধু........ সাধু।