Skip to main content

নেশা





-   প্রযুক্তিই আমাদের খেয়ে ফেললে গিন্নী।

-   বুঝি গো, ছেলেটাকে নিয়ে তুমি বড় বিরক্ত হয়ে পড়ছ আজকাল।

-   বিরক্ত হব না? অমন ঠ্যাঁটা ছেলে আমাদের যুগে পয়দা হলে বাপ মা চাবকে সোজা করে নিতে। তবে আজকালকার ব্যাপারস্যাপার আলাদা। বাপ হয়েছি কিন্তু মেজাজ দেখানোর কোন উপায় নেই। ধুস।

-   এত রাগছো কেন গো!

-   রাগবো না? গোটা দিন ওই গা পিত্তি জালিয়ে দেওয়া পুঁচকে বোকা বাক্স মাফিক ব্যাপারটায় মুখ গুঁজে পরে আছে। খাওয়ার সময়, শোয়ার সময়, সর্বক্ষণ মুখের সামনে ওই একই জিনিষ খুঁড়োর কলের মত ঝুলছে। বাপ মায়ের সঙ্গে দু’টো কথা বলবে সে সময় পর্যন্ত নেই। এ বয়েসের ছেলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মিলে দুদণ্ড হই হই করবে;  ব্যাটার সে সুযোগ পর্যন্ত নেই। অসামাজিক হয়ে পড়েছে ব্যাটাচ্ছেলে।

-   আমারও কি চিন্তা হয় না। ছেলের যেন আমাদের সাথে কোন সম্পর্কই নেই গো। গোটা দিন বসে আছে মুখ গুঁজে। তবে এ যে যুগের হাওয়া। ওর বয়েসি সব ছেলেমেয়ের কাছে ওই একই জিনিষ। বাড়ন্ত বয়েসের ছেলে, খেলাধুলোর দিকে ঝোঁক নেই। শুধু ওই এক নেশা। কিছু বললে বলে, আধুনিক যুগে নাকি শেখার শ্রেষ্ঠ উপায় ওই পোড়া জিনিষটাই।

-   আমাদের সময় আমরা প্রকৃতির কাছ থেকে শিখেছি, মানুষের কাছ থেকে শিখেছি। শুধু চোখের দেখা নয়, কানে শুনেছি, ছুঁয়ে দেখেছি দুনিয়াটা। সমাজের একজন হয়ে সমস্ত কিছু চিনেছি, জেনেছি, বুঝেছি। প্রযুক্তির হাতে পেষাই হয়ে সে সব প্রাকৃতিক আর সামাজিক যোগাযোগগুলো এমন ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে তা কোনদিন ভাবিনি গিন্নী। মানুষ আজকাল এই পুঁচকে নিষ্প্রাণ বোকা ডিবেগুলো উল্টে পাল্টে শিক্ষা পেতে চায়, আনন্দ পেতে চায়। সে শিক্ষার মূল্যই বা কোথায়, সে আনন্দের গভীরতাই বা কোথায়! তুমিই বলো গিন্নী।

-   কী আর করবে বলো, যুগের হাওয়া। আমাদেরই মানিয়ে নিতে হবে নিজেদের।

-   ধুত্তোর ছাই। প্রযুক্তিই সর্বনাশ করবে আমাদের দেখো।

-   কী নাম যেন সেই মুখপোড়ার? সেই ঘুঁটে না গুটে কী যেন...যে এই পোড়ামুখো আবিষ্কার করলে।

-   সত্যিই। গুটেনবার্গ যে কী সর্বনাশই করলে ছাপাখানা তৈরি করে আর এই বইয়ের উৎপাত শুরু করে। এই ক’বছর আগে পর্যন্ত কটা লোক পড়তে পারত? পুঁথি-টুথি যোগাড় করা চাট্টি খানি কথা ছিল না। এখন দেখ অলিতে গলিতে বইয়ের দোকান। সস্তা যত বই ঘুরছে রাম শাম যদু মদু সক্কলের হাতে। গণিতের বই, রান্নার বই, গল্পের বই। গা পিত্তি জ্বলে যায় গো। আমাদের ছেলেটাও বইয়ের পোকা হয়ে পড়লো শেষে। সমস্ত ছেলেপিলে ছোকরা বইয়ের খপ্পরে পরে বখে গেল গো। খোকাটাকে এই পোড়া বইয়ের নেশাই ডুবিয়ে ছাড়বে।  

      

*ইয়ে, বই দিবসের শুভেচ্ছা*

Comments

Beas said…
Kaan eto kore haslam.
Mohua Roy said…
Boi dibas er suvechha boi ki. unique perspective:) enjoyed.
Eta level!😁😁😁😁
Atanu Dey said…
তুখোড় হয়েছে লেখাটা।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু