Skip to main content

#MyChoice



ঠা ঠা রোদ। প্যাঁচালো লম্বা দুর্দান্ত লাইন; ভোট দেওয়ার। সেই লাইনে দ্রাবিড়ের ফোকাস নিয়ে দাঁড়িয়ে অমু। ডান হাতে ছাতা, বাঁ হাতে শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজের একটা বই মেলে ধরা। ঝড়ের গতিতে শীর্ষেন্দুর ভূত, ডাকাতের অ্যাডভেঞ্চার পেরিয়ে যখন বইটা খতম করলে অমু, তখন সে ইভিএম মেশিনের সামনে। হঠাৎ কী মনে হল। অমু বইটা বগল দাবা করে ঝপ করে বুথ ছেড়ে চলে এলে ভোটটা না দিয়ে। মনে মনে ভাবলে “ #MyChoice”; মুচকি হাসলে অমু। 

**
অপু। নিজের উপন্যাসের খসড়া ছিঁড়েখুঁড়ে উড়িয়ে দিয়েছিল। দ্যাট মাই ফ্রেন্ড ওয়াজ হিজ চয়েস, এ ডেয়ারিং মোস্ট চয়েস। 

**
- তুমি আমার বাপির দেওয়া চাকরীটা নেবে না?
- না।
- কেন?
- ক্লার্কের কাজ আমার পোষাবে না।
- টিউশানি পোষায় আর কর্পোরেটে চাকরি পোষাবে না। তোমার কী আমায় বিয়ে করার ইচ্ছে নেই?
- তোমার বিয়ে করতে চাই। তোমার বাবার মাতব্বরিকে না।
- তুমি চাকরিটা নেবে না? তুমি ভালো করেই জানো চাকরিটা না নিলে আমাদের বিয়ে সম্ভব নয়। আমার সাথে এতদিন প্রেম করে এখন বিয়ে করতে চাইছ না? তোমার পেটে পেটে এত শয়তানী?
- আমার পেটে শয়তানী আছে কী না জানিনা। তোমার মগজে লজিকের থলিতে লিক আছে। ও চাকরি আমি নেবো না। দ্যাট ইজ মাই চয়েস। টিউশানি করা ছেলেকে বিয়ে করবে কী না, সেটা তোমার চয়েস।

**
অনিলবাবুর সঙ্গে খবরের কাগজের যোগাযোগ শুধু ক্রস-ওয়ার্ড পাজ্‌লটি পর্যন্ত। টেলিভিশনের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে শুধু হপ্তায় তিনটে কার্টুন শো। অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে শুধু নিজের টেবিল আর তার ওপর জমা ফাইলগুলো পর্যন্ত। কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ বলতে নিজের বাড়ির ছাতের উত্তর কোণটি পর্যন্ত। মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে মানিব্যাগের ময়লা সাদা কালো ছবিটা পর্যন্ত। প্রেমের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে শরৎচন্দ্রের নভেল পর্যন্ত। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে আপিসে বস, বাসে কন্ডাক্টর আর বাড়িতে আয়না পর্যন্ত। অনিলবাবুর জীবনের চয়েসগুলোকে পাবলিক হুল্লোড়ের সামনে রেসের মাঠে দৌড়তে হয় না। 

**
রোববার। চৈত্র সেলে যাওয়ার কথা দীপুর। বৌকে নিয়ে। 
এমন সময় হঠাৎ দীপুর কাতর স্বীকারোক্তি; 
- “হ্যাঁ গো শুনছো...”
- “আবার কী হল?”, মিসেস দীপু ‘আবার কী হল’ বলে নাক কুঁচকোতে পছন্দ করেন।
- “বসের ফোন এসেছিল। অফিসে ক্রিটিকাল ব্যাপার। আমায় যেতেই হবে”।
- “হোয়াট ননসেন্স। রবিবারেও অফিস? আর এদিকে শপিঙয়ের প্ল্যান হয়ে আছে। গড়িয়াহাটে রীনারা ওয়েট করে থাকবে। হাউ এম্ব্যারেসিং।“
- “প্লীজ সোনা। প্লীজ। ইয়ার এন্ডের সময় কী না। ভারী চাপ। প্লীজ”। 
কোণ রকমে মান বাঁচিয়ে অফিস আসে দীপু। সুনসান অফিসঘর। চেয়ারে হেলান দিয়ে টেবিলের ওপর পা লম্বা করে দেয় সে। প্রথমে টেলিফোনে পিৎজার অর্ডার দেয়। তারপর গা এলিয়ে দিয়ে মুখের সামনে মেলে ধরে অফিসের গোপন দেরাজ থেকে বের করে আনা “বাঁটুল দ্য গ্রেট অমনিবাস”। 
এটাও কী এক ধরনের অ্যাডালটারি? ক্ষণিকের চিন্তা উদয় হয় দীপুর মনে। পরমুহুর্তেই মনে হয়, “ধুর শালা, মাই চয়েস”। 


Comments

malabika said…
এই যে ব্লগটা বেরোন মাত্র গোগ্রাসে গিলে ফেললাম, এই পর্যন্ত মাই চয়েস ঠিক আছে; কিন্তু তারপরে মাই চয়েস কেন আর চয়েস মত বেগবতী হয় না? আমি কেন যে এরকম ভাবে accordingbto my choice লিখে যেতে পারি না।
chupkotha said…
Dipur choice tai best.. Amar je ota korte ki ichhey kore ek ek somoy.. :)

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু