Sunday, March 30, 2014

শব্দান্বেষী : একটি অল্প-বিজ্ঞান-মূলক সাক্ষাৎকার


-          প্রোফেসর দত্ত, প্রথমেই আপনাকে আমাদের পত্রিকার তরফ থেকে বলি ; কংগ্রাচুলেশনস

-          অনেক ধন্যবাদ।


-          ভারত এবার জগত সভায় সত্যিই একটা পেল্লায় কিছু করে দেখালে আর করে যে দেখালে, তা  একজন বাঙালির হাত ধরে। আপনার হাত ধরে। দু হাজার বত্রিশের নোবেল তো পাচ্ছেনই, পৃথিবীর একশো বত্রিশটি দেশ আপনাকে নাগরিকত্ব দিয়ে নিজেদের ধন্য মনে করছে।

-          হে হে হে


-          আমরা ভীষণ গর্বিত আপনাকে নিয়ে।

-          হে হে হে


-          আপনার আবিষ্কার পৃথিবীর মোড় ঘুরিয়ে দিতে চলেছে। ইন্ধন ও জ্বালানির সমস্যা সম্পূর্ণ উবে যাবে। এই উলুবেড়িয়ায় বসে, এমন ম্যাজিক করলেন কি করে ? তাও সামান্য সমস্ত শব্দ কে হাতিয়ার করে ?

-          সামান্য ? সামান্য কি বলছেন ? ব্রহ্মাণ্ড ইমার্স্‌ড রয়েছে স্রেফ একটা শব্দের মধ্যে; ওঁ। একবার ওম বলে দেখুন না মশায়। বুকের ভেতর অক্সিজেন সাপ্লাই কেমন আলগোছে বেড়ে যায়।


-          আপনার আবিষ্কারের ব্যাপারে একটু খুলে বলুন। আপনার এই অ্যাকউস্টিক-পাওয়ার-জেনারেটর দিয়ে গোটা পৃথিবীর জ্বালানি সমস্যা কি ভাবে মিটে যাবে ? ডিজেল, এল পি জী; এসবে পকেট কাটা যাওয়ার দিন কি সত্যি এসে গেছে ? আমাদের সাধারণ পাঠকদের একটু সহজ করে বুঝিয়ে দিন প্লিজ।

-          আলবাত। আমার এই প্রোজেক্ট-উলুবেড়িয়ার কিন্তু সেই শ-খানেক বছর আগেকার প্রোজেক্ট-ম্যানহাটনের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। ইউরেনিয়াম বা ওই জাতিও সমস্ত রেডিও অ্যাক্টিভ পদার্থ ছিল সে সময়ের কাঁচা মাল।  অ্যাটমিক ফিস্‌নের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল পারমানবিক শক্তি। যে শক্তিতে চাইলে হিরোশিমাকে ঝলসে দেওয়া যায় আবার চাইলে সুদানের ছোট্ট গ্রামের ছোট্ট স্কুল ঘরে বাতিও জ্বালানো যায়তবে আমার প্রোজেক্ট-উলুবেড়িয়া স্রেফ পদার্থবিদ্যার খেল নয়। এখানে তাঁর সঙ্গে জুড়েছে বায়ো-মেকানিক্স, সাইকোলজি, কেমিস্ট্রি ও বায়ো-কেমিস্ট্রির কিছু অবস্কিওর ব্রাঞ্চ। আর আমাদের ক্ষেত্রে কাঁচা মাল হল কিছু পাতি বাঙালি শব্দ।


-          এই খানে একটা প্রশ্ন আছে। শব্দের আবার বাঙালি-অবাঙালি কি ?

-          ভালো প্রশ্ন। প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে আমার এই এই অ্যাকউস্টিক-পাওয়ার-জেনারেটর যন্ত্রটি কি। একদম পাতি। ডাইমেনশনে ধরুন একটা দশ ফুট বাই বারো ফুট ঘর। তাঁর একদিকে সাউন্ড রিসেপ্টর। মাঝে প্রসেসর। অন্য-প্রান্তে অত্যাধুনিক ট্রান্সমিশন গ্রিড। শব্দ-নির্জাসটুকু নিয়ে সেখান থেকে তৈরি হয় ইন্ধন। আর ইন্ধনের জ্বালানি ক্ষমতা এমন হাই ক্লাস যে বাড়ির চুল্লি থেকে বিমান থেকে রকেট সমস্ত চালানো যায় তা দিয়েএকটি যন্ত্রের আধ বেলার উৎপাদনে গোটা কলকাতা চলে যাবে তিন দিন। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন, সমস্ত অর্থনীতির ভোল পাল্টে যেতে চলেছে।
তবে আমরা শুধু শব্দের ফিজিক্যাল কোয়ালিটিগুলো ব্যাবহার করি না। আমার এই যন্ত্র যে অ্যালগোরিদ্‌ম ব্যাবহার করে তাতে ইনপুট-শব্দের ইমোশনাল টিম্বার আর বি-কিউ খুব গুরুত্বপূর্ণ।

Saturday, March 22, 2014

আসল জাদুর গল্প



এখন-১

ছয় দিন হয়ে গেল বাবা বাড়ি ফেরেনি। মা কেঁদে কেঁদে হয়রান। কিন্তু কাজের খবর বলতে কিচ্ছুটি নেই। ভয়ে, দুঃখে মা’র সাথে কথা বলা তো দূর, মায়ের কাছে ঘেঁষতে ভয় পাচ্ছে ওসাং।

সে জানে যে এ সমস্ত তার দোষেই হয়েছে। তারই দোষ। কিন্তু তাঁর কথা এখন কে বিশ্বাস করবে ? বাবাই যে নেই।

**  
বেশ কিছুদিন আগে -১

ওসাং জানে ভ্যানিশ করে দেওয়ার ম্যাজিক সত্যিই আছে। তার ছয় বছরের জীবনে সে তার বাবাকে অন্তত তিনশো বার দেখেছে কিছু না কিছু ভ্যানিশ করতে। লুডোর ছক্কা, পাউডারের কৌটো, বদ্রি পাখি থেকে শুরু করে হাত টানা রিক্সা পর্যন্ত। এমনকি বেশ কয়েকবার তো স্টেজের ওপর ওসাং’য়ের মাকেও ভ্যানিশ করে দিয়েছে ওর বাবা। বাবা মস্ত বড় জাদুকর কি না। বেইজিং শহর শুধু নয়, পুরো চিন জুড়ে খোঁজ চালালেও ওসাং’য়ের বাবার মত জাদুকর পাওয়া দুষ্কর।

ভ্যানিশ হয়ে যাওয়ার খেলা দেখতে যে কী ভালো লাগে ওসাং’য়ের। সেও যদি অমন ভাবে জাদু করতে পারতো বেশ হত। পারলে; সবার আগে স্কুল-বাড়িটাকে হাপিশ করে দিত ওসাং।

**
বেশ কিছুদিন আগে -২

লিসাং’য়ের বুক ভরে যায় যখন তাঁর ছয় বছরের ছোট্ট ছেলেটা কলকলিয়ে হেসে ওঠে তাঁর যে কোনও ছোটখাটো জাদু কেরামতিতে। হাজার লোকের হাততালিতেও লিসাং সে আনন্দ খুঁজে পায় না।

লিসাং বুঝতে পারে যে ভ্যানিশ করে দেওয়ার খেলা দেখতে সব চেয়ে বেশি পছন্দ করে ছোট্ট ওসাং। তাঁর সরল শিশু মন ঠাহর করতে পারে না যে আদতে কিস্যু ভ্যানিশ  হয় না। সবই হাতের কারসাজি আর চোখের ভাঁওতা।

**
মাস খানেক আগে

-   বাবা, আমি কিছু ভ্যানিশ করতে পারি না কেন ?

Saturday, March 8, 2014

প্ল্যান

তিনি -  আমার হাতে সময় একদম নেই।

বৈজ্ঞানিক - শান্ত হন। যানটি প্রস্তুত প্রায়।

তিনি - এটা মাঝ পথে বিগড়ে যাবে না তো ? নয়তো সত্যিই আমায় আত্মহত্যা করতে হবে বৈজ্ঞানিক...

বৈজ্ঞানিক - কি বলছেন স্যার ? ম্যানহ্যাটন প্রজেক্ট অমন বাঘা জিনিষ তৈরি করছে জেনেও আপনি এই মহা-গোপন প্রোজেক্ট থেকে আমাদের সরিয়ে বোমা বানানোয় নিযুক্ত করেননি। আপনার বিশ্বাসের অমর্যাদা হয়নি। যন্ত্রটি নিশ্চিন্তে কাজ করবে। আপনার পাত্তা আর কোনও দিন কেউ পাচ্ছে না।

তিনি – আমার স্ত্রীও যাবেন আমার সাথে...জেনারেল...ব্যবস্থা সব ঠিকঠাক ?

জেনারেল – অবশ্যই। আপনার ও আপনার স্ত্রীর ডামি দুজনকে তৈরি রাখা হয়েছে। আপনাদের যাত্রা শুরু হলেই সেই ডামি দুজনকে বাধ্য করা হবে আত্মহত্যা করতে।

তিনি – গুড। জেনারেল, মনে রাখবেন যুদ্ধ এখানেই শেষ নয়। আমেরিকার এই বেলেল্লাপনার জবাব আমি দেবই। আমার ল্যান্ডিং’য়ের প্ল্যান তৈরি তো ?