Saturday, November 15, 2014

প্রথম পেগ


-   এটা কী?
-   মদ।
-   মদ?
-   মদ।
-   তুই খাস দাদা?
-   আজ থেকে তুইও খাবি।
-   পাগল না কী?
-   দাদাকে পাগল বলছিস?
-   বলবো না?
-   না।
-   তুই মদ খাস! বাবা-মা জানলে...
-   তুই জানাবি?
-   না। মানে জানাতে চাইলেই বা পারছি কোথায়...
-   তবে? সব কথাতেই এত কুঁইকুঁই করিস কেন মিঠু? তুই না আমার ভাই? বাঘের বাচ্চার মত কথা বল।
-   বৌদি জানলে...
-   তুই জানাবি?
-   না। মানে জানাতে চাইলেই বা পারছি কোথায়...
-   শোন। এটা ভালো জিনিষ।
-   মদ ? ভালো জিনিষ?
-   আলবাত। আয়ু বাড়ে।
-   ছিঃ। মিথ্যে বলতে শিখে গেছিস রে দাদা!
-   শাট আপ মিঠু। আমি মিথ্যে বলি না। ডাক্তাররা আজকাল স্ট্রংলি রেকমেন্ড করে। ডেইলি দু’পেগ। পরিমিত। বাড়াবাড়ি নয়। হার্ট ভালো থাকে।
-   আমার বৌ জানতে পারলে?
-   তুই জানাবি?
-   না। মানে জানাতে চাইলেই বা পারছি কোথায়...
-   গুড বয়। শোন। এটাকে বলে স্কচ। আদত বিলিতি। দেবতুল্য মেজাজ না থাকলে এসবের মর্ম বোঝা যায় না রে মিঠে। অল্প চুমুক আর সঙ্গে সঙ্গে এক মুঠো চানাচুর। বুঝবি ছাতে উঠতে সিঁড়ি লাগে না চাঁদ।
-   চাঁদ? এটা আবার কেমন ডাক?
-   মদের আসরে ডাক-খোঁজ অমন হতে হয়। চাঁদ, চাঁদু, ইয়ার, দোস্ত। ভাই-টাইয়ের মত ক্যাবলা স্যালুটেশনের কোন স্কোপ নেই মদের আসরে।
-   নিয়মিত মাতলামি করছিস এমন হাবভাব দেখাচ্ছিস।
-   আরে মদ ব্যাপারটাই তো অ্যাটিচিউডের। ডাকাতও মদ খায়, কবিও খায়। পারস্পেক্টিভ পালটে যায়।
-   কবে থেকে এসব ধরেছিস?
-   এই আজ থেকে ধরবো। ঠিক করে ফেলেছি। এই যে বোতলটা দেখছিস, এটা খোদ লান্ডন থেকে এসেছে। বাবা এনেছিল। আলমারিতে রাখা ছিল।বহুদিন তক্কে তক্কে ছিলাম। আজ বের করে এনেছি। বহু পুরনো চিজ। সুপার ফাইন ব্যাপার।  
-   হুম। আমাকে দলে টানছিস কেন?
-   লেভিটেশনের মজা শুধু আমি নেব মিঠু?
-   কচু। তুই চাইছিস তোর সাথে আমাকেও ডোবাতে। এ বয়সে মদ ধরবো দাদা?
-   টু আর্লি?
-   আর্লি?
-   নয়? মানে, তোর বয়স তো আফটার অল আমার চেয়ে কম।
-   সে তো মাত্র দু’বছরের ফারাক।
-   দু’বছর অনেকটা মিঠু। এ বয়স থেকেই টানতে শুরু করলে লিভারের বারোটা বাজবে'খন। আর তোর সাহস তো কম নয়? তুই নিজের দাদার সঙ্গে বসে মদ খাবি মিঠু? এত বেয়াদপি?
-   যা বাবা। তুই’ই তো বললি। যাক। তুইও বরং মাস দুই ব্যাপারটা বাদ দে। ডিসেম্বরের তেরোয় আমার জন্মদিন, সতেরোয় তোর। আঠেরো তারিখ থেকে বরং দুজনে উঠেপড়ে লাগবো। কি বলিস দাদা?
-   নট আ ব্যাড আইডিয়া।তবে একবার যখন ধরবো...বুঝলি...দেখিয়ে দেব মদ খাওয়া কাকে বলে। একটা জবরদস্ত মুঘলাই রাঁধুনি জোগাড় করতে হবে মিঠে। রোজরোজ বানাবে কাবাব।
-   আর তার সাথে স্কচ। তাই তো? বেশ। এগ্রি করছি তাহলে। তুই পালটি খাবি না তো তখন?
-   ভদ্রলোকের এক কথা। তবে যদি কেউ জানতে পারে?
-   তুই জানাবি কাউকে?
-   না। মানে জানাতে চাইলেই বা পারছি কোথায়...
-   গুড বয়। এ জন্মদিনে তোকে একটা সেগুন কাঠের রকিং চেয়ার দেব রে মিঠু।
-   বেশ। তুই আমার থেকে কি নিবি? তোর জন্মদিনে?
-   হেঃ। একটা সেগুন কাঠের রকিং চেয়ার।
-   ওহ। কী আনন্দ। তাই হবে।
-   দু’টো চেয়ারকেই ছাদে প্লেস করেগা, বুঝলি মিঠু। দুটো চেয়ারের মাঝে একটা ছোট টেবিল। তার ওপরে দু’টো কাঁচের খাঁজ কাটা গেলাস। তাতে হুইস্কি।
-   সাথে মাছ ভাজা।
-   মৌরলা?
-   অফ কোর্স।
-   আর মুখে বিকেলের হাওয়া। রেডিওতে গান। জো ওয়াদা কিয়া উয়ো নিভানা পড়েগা।
-   রোকে জমানা চাহে রোকে খুদাই তুমকো আনা পড়েগা। বিউটি। কবে যে জন্মদিনটা আসবে রে দাদা।
-   হ্যাঁ। আর তর সইছে না। কবে যে জন্মদিনটা আসবে। আর আমরা দু’জনে মিলে এই বোতলটা খুলবো। ব্রিলিয়ান্ট। হ্যাঁ রে মিঠে, এবারে তুই কত বছরে পড়বি ?
-   আমি চুরানব্বই। তুই ছিয়ানব্বই।
-   তোফা। তোফা।
-   তোফা।      

3 comments:

ashok raaj said...

Kyaa baat..!!! Khub bhalo.. Ha ha ha..!!! Tanmay.. Ami kintu aapnar bhakto hoye jachchi din din..!!! Jago bangali, rosik bangali..!!!

অনির্বাণ said...

seshe mochor ta besh ..

Diptakirti Chaudhuri said...

Durdanto hoyechhey... ekebarey Tarapada Ray level!