Skip to main content

এগরোল ঘটিত



-              দাদা, এগরোলটা একটু মন দিয়ে ভাজবেন
-              কড়া না নরম ?
-              না কড়া না নরম
-             
-              তাই বলে আবার মাঝামাঝি ভাববেন না
-              মানে ?
-              মানে ঠিক কড়া আর নরমের মাঝামাঝি ভেজে দেবেন না কড়া ঘেঁষা ভাজবেন না নরম ঘেঁষা ভাজবেন, তবে নরম নয়
-              কি ?
-              মানে রুটির গায়ে লালচে ছোঁয়াচ জমাট বাঁধলেই ওর বুকে ডিম ছড়িয়ে দিন কালো ফোস্কা পড়তে দেবেন না
-              ধুর এমন বাতিক থাকলে নিজে বাড়িতে ভেজে খাবেন
-              তা কি হয় বাবা আমি সংস্কৃতে এম- বলে কায়স্থ হয়েও পূজো করবো ? বামুনের রোল বামুনেরই থাকবে তোমার ছোঁয়া আর এই পাবলিক চাটুর সারফেস না পেলে এগরোল যে আলুনী ডিম-রুটিতে কনভার্ট হয়ে যাবে ভাজো ভাজো আমি বলে দেব কখন থামতে হবে
-              কি মাল মাইরি আপনি
-              শিখে নাও মাল
জেনুইন ব্যস ব্যস রোককে রুটি ভাজা হয়ে গেছে ডিম ফেলো এবারে
-              বড় কথা বলেন আপনি
-              আহ, রুটিতে ডিম ছড়াতে ছড়াতে আবার কথা বল কেন  ফোকাস গড়বড় হয়ে যাবে ডিমের কনসেন্ট্রেশন রুটিময় সমান না হলে টাকাটাই জলে
-              ওফ
-              ওই খুন্তির চাপের সঙ্গে সঙ্গে রুটির গায়ে ডিম আলতো ফেঁপে উঠছে টেক দ্য রুটি অফ দ্য চাটু নাউ চাটু থেকে নামিয়ে ফেলো
-              আপনি চিজ মাইরি
-              কদর কর বাবা কদর কর প্রতিভা বাঙালির কপালে সয় না শসা দেবে ? অল্প শসায় আপত্তি ছিল না কিন্তু যে টি-ট্যুয়েন্টি মেজাজে মোটা দাগের শসা কুচিয়েছ, চলবে না রোল হচ্ছে লর্ড্ টেস্টের সকাল স্কুপ-রিভার্স সুইপ নৈবচ
-              কী বকে যাচ্ছেন তখন থেকে ?
-              চটছ কেন? বলছি শসা বাদ দাও অনলি পেঁয়াজ মিহি লংকা কুচি অল্প টম্যাটো সস্ থুড়ি কুমড়ো সস্চার ফোঁটা লেবুর রস নো মোর নো লেস ব্যাস ব্যাস, আর নয় অল্প নুন। প্লাস সামান্য বিট নুন ইয়েস ইয়েস ওয়েল ডান আর অমন ভাবে রোল কাগজে মুড়ছ কেন ? তুমি সৈনিক নও, তুমি শিল্পী তুমিই এক সময় গুহাচিত্র এঁকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলে তোমার আঙুল ছুঁয়েই কত ফ্রেসকো প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে তাই আজ তুমিই পারো এগরোল বানাতে। এবং তাই বলি শুধু কাগজে নয়, বাড়তি দু পরত ভালোবাসায় এগরোল মুড়তে হবে 
-              এই আপনার এগরোল এখন চব্বিশ টাকা ছেড়ে হাপিশ হয়ে যান দেখি তখন থেকে খালি ভ্যানতারা...

Comments

Anonymous said…
আহ! অসাধারণ। রুটির বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকা ডিমের প্রেমের মতোই। যেন আমার বুকে লুকিয়ে রাখো তোমার সব সুখ দুঃখ। :)
Anonymous said…
ও কাকা পরোটা হবে না ওটা? কদিন ধরে যা এগ রোলের বহর দেখছিলাম। এটা তো কপালে নাচছিলই!
আহা, বাবুর্চী স্পেশ্যাল রোল-এর কথা মনে পড়ে গেল। মনমাতানো ময়দার দুটো লেচী বেলনার রগড়ানিতে এক হয়ে গিয়ে তৈরি হয় প্রমাণ সাইজের একখানা রুটি। তাকে তেলে আলতো করে ভেজে নিয়ে ঠকাস ঠকাস যোগ হয় একজোড়া ডিম। সে ডিম খুন্তি দিয়ে ফরাসী অপেরা পরিচালকের মত ঝড় তুলে ছড়িয়ে দেওয়া হয় কোনায় কোনায়। এবার সে সুবিশাল রুটিতে যোগ করা হয় মশলা মাখা আলু-সব্জী, কিছুটা চিকেন, খানিকটা মাটন, এত্তোখানি পনীর, সস, বিটনুন, লেবুর রস। কাগজে আর চকচকে রুপোলী ফয়েলে আপাদমস্তক মুড়ে সে বাঘা রোলকে রাঁধুনি দু'হাতে করে তুলে দেয়, কোনও বড় টুর্নামেন্টে জেতা ট্রফির মত। আশেপাশের লোকেরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। তারপর কোথাও বসে আয়েসে হেলান দিয়ে একটু একটু করে তাকে সুখভক্ষণ করা... কোথায় লাগে পিজ্জা-বার্গার!

জিভটা জলে ভরে গেল। কলকাতায় থাকলে এখনই রোলের দোকানে ছুটতাম। কিন্তু এখন নিরুপায়; যাই অমলেট ভেজে খাই।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু