Thursday, May 30, 2013

তাঁরা




- আরে বাবা কেউ দরজাটা খোল, কখন থেকে কড়া নেড়ে চলেছি...বিশ্রি মানুষ তোরা...।

- কে?

- যাক,এতক্ষণে অন্তত কেউ ডাক শুনেছে , এ'বার দরজাটা খোল দেখি।

- দরজা খোলার ভার যার ওপর সে কিছুক্ষনের জন্যে নেই। আপনি একটু অপেক্ষা করুন। তিনি এলেই...।

- এই এলাম। ঘেমে-নেয়ে একাকার। এদ্দূর ঠেঙিয়ে আসা কি চাট্টিখানি কথা? একটু দরজাটা খুলে দিলে ভিতরে ঢুকে আগে জিরিয়ে নিতে পারি৷

- দরজা খোলার অধিকার যে আমার নেই ভাই। আর একটু দাঁড়াও, তাঁর আসার সময় হল বলে। আচ্ছা, তোমার কণ্ঠস্বর শুনে মনে হয় বয়স অল্প৷ তাই তুমি করেই ডাকছি, কেমন? 

- তুইও চলবে। তুই ব্যাপারটা আমার বেশ মিষ্টি লাগে৷

- তা'বটে৷ অসুবিধে নেই।

- ইয়ে, তোর...মানে আপনার কন্ঠস্বরটা চেনা ঠেকছে। 

- তুই ব্যাপারটা চালিয়ে যেতে পারো ঋতুপর্ণ৷ আমার কিন্তু বেশ লাগছে৷ 

- মা..মাণিকবাবু? ওহ্..।

- মনে হয় দারোয়ান-বাবুর সহজে পাত্তা মিলবে না। তোমার  জন্যে নিয়ম ভাঙাটা অন্যায় হবে না। দাঁড়াও, দরজাটা খুলি৷ এত অল্ল বয়েসে এ অঞ্চলে ঢুঁ মারবে ভাবিনি। 

- বাঁচা গেল, এখানেও দেখছি কলকাতার মত ভ্যাপসা গরম। 

Tuesday, May 21, 2013

হরির কল

হরির কাজে মন নেই। গোটা দিন কল-কব্জার ঘ্যাঁচ-ঘোচ। প্রোডাকশন প্রোডাকশন করে দিনভর ধানাই-পানাই। জান বিলকুল কয়লা। দুনিয়াটাই ফালতু। ধুর।

শিপমেন্ট আসে, শিপমেন্ট যায়; বেওসা বেওসা করে হরির হাড়ে দূর্বা গজায়। তাও ম্যানুফ্যাকচারিং হলে হরির মনে হত যে কিছু একটা জব্বর কাজে আছে। তা নয়, স্রেফ প্রসেসিং। যে কাঁচা মাল ফ্যাক্টরি তে ঢুকল, তাকেই এক যন্ত্রে জীবাণু-মুক্ত করে নেওয়া, তারপর অন্য যন্ত্রে ঘষে-মেজে নেওয়া, অতঃপর সেই মান্ধাতা আমলের প্রসেসরে সেই কাঁচা মাল গুঁজে দিয়ে রি-ফরম্যাট করে নিষ্পাপ করে নেওয়া। অতি মামুলি কেস।।

Friday, May 10, 2013

কলকাতার ডাকনাম

কলকাতা একটি অতি ধামড়া, বেয়াক্কেলে, উচ্চমাধ্যমিক-অঙ্কে ব্যাক পাওয়া ছেলে।  ক্লাস সেভেন থেকে কবিতা লিখে আর ক্লাস নাইন থেকে বিড়ি ফুঁকে যে বেমালুম বখে গিয়েছে। বাহানাবাজিতে নোবেল থাকলে সে বিশ্বের কনিষ্ঠতম নোবেল লরিয়েট হতো। ফাঁকিবাজির দুনিয়ায় সে আলেকজ্যান্দার। বাপের গালি , মায়ের মুখ ঝামটা, ভাই-বোনের বিদ্রুপ আর খুচরো প্রেমিকার অবজ্ঞায় বেড়ে ওঠা হেলদোল-বিহীন একটি চরিত্র। একধার দিয়ে পেটুক এবং অন্য ধার দিয়ে পেট পাতলা - এবং সেই কারণেই তার বুকের পাঁজর গোনা যায় আবার অন্যদিকে তলপেটে সে সামান্য নেদু ভুড়িটি যত্নে পুষে রেখেছে । এই কলকাতা ; মদ না খেয়েই  মাতালামি করে  যে পাবলিক-ক্যালানি খায়। 

কিছুই আর করে উঠতে পারেনা

Wednesday, May 8, 2013

রবিজ্ঞান

রবি ইজ আওয়ার কম্যুনিটি-হবি। হেবি আমেজ। 

কবিত্বের গভীরতা সম্বন্ধে বিশেষ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না; কারণ ভদ্রলোক মদ্যপান তেমন করতেন বলে শোনা যায় না। তবে  দাঁড়ি তে যদি থাকে জীবন-মুখির আসলি মেজাজ, তাহলে  নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে রবি'ই হলেন প্রাচীন নচিকেতা।  শুধু জিন্স আর বাতেলা বাদ থাকায় নচি-সম গ্ল্যামার-রূপ  বাদ থেকে গেলো। নচির ওই হু-লা-লা-লা'র ছোঁয়ায় অবশ্য রবিবাবুর পাগলা হওয়া গানটা অনেকটাই দাঁড়িয়ে গেছে।  

তবে নেহাৎ হেলাফেলার মাল নন। হাজার হলেও নোবেল ম্যানেজ করেছেন, বোলপুরে ইস্কুল আর গুচ্ছ আঁতলামো ছেড়ে গেছেন। রাস্তায় মূর্তি, শো-কেসে সাজানো রচনাবলী এবং শাওয়ারের তলে একলা চলো'র সুর। এলেম তো আছেই। তাছাড়া  বুদ্ধিমান পাবলিক  মাত্রই বুঝবেন যে ওনার আঁকার হাতটা অনেকটা আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর মত।

ইয়ে, দাঁড়িওয়ালার বৌদির সাথে একটা ইয়ে ছিলো না ? কে একটা বলছিলো যেন, আমি অবিশ্যি পাত্তা দিইনি।

চুমুতে হামিতে





ঠোঁটে ঠোঁট চকামে তৈয়ার হল চুমু।

চুমুতে রইলো আকস্মিকতা। রইলো চলকে ওঠা হুইস্কি গেলাসের মিচকে হাসি, ছাদের গন্ধ, মাথা ঝিমঝিম, ঠোঁট-বুক-হাতের স্পর্শে পেলব বিস্ফোরণ।  ফার্স্ট-ইয়ারের বেমক্কা দু জোড়া ঠোঁটের কলম্বাস-হিউয়েন সাং জুটি বনে ওঠা। চার পাশের বিশ্ব-যুদ্ধ বাষ্প হয়ে উড়ে যায়, থকথকে বুক-জোড়া পড়ে থাকে। খেজুর রসের হাঁড়ির মত সুর জমে ওঠে চুমুর ভেজা-ভেজা আবেশে। পৃথিবী লেংচে চলে।  চুমুর পালা শেষ হলেই অক্সিজেন খতম হয়ে যাবে দুনিয়া থেকে; এমন ভয় জুড়ে থাকে নলবন, দত্ত-বাড়ির পুকুর-ঘাট, মন্টুদের চিলেকোঠা এবং অন্য প্রতিটি পাঁজর-তীর্থে

Tuesday, May 7, 2013

অতি স্যার-বাজি

আসুন স্যার। 
বসুন স্যার। 
বলুন স্যার। 

আমি কি করতে পারি স্যার। 
আপনি বললে আমি সব করতে পারি স্যার। 
আমায় এক বার বলেই দেখুন না স্যার। 
আপনি হলেন ভগবান স্যার, আমি মাছি পাতি।

দুপুরগুলো


বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুপুরগুলো ভারী মামুলি হয়ে পড়লে। মা'র বকুনি নেই, বুন্তু-দিদির হাতে মাখা কাঁচা আম কুচি নেই, ভর দুপুরে ইয়ার-দোস্তের হাঁক-ডাক নেই অন্য পাড়ায় ম্যাচ খেলতে যাওয়ার জন্যে। এমন কি ঠা-ঠা রোদ্দুর মাখা ছাদের কোনের ভিজে মায়াও নেই; যেখান থেকে পাশের বাড়ির মেয়ে মামনের ঘরের জানলা দেখা যেত। গরমের ছুটিতে পাড়ার নাটকের দলের রিহার্সাল, দত্ত-পুকুরে ছিপ ফেলা, ভূদেব-কাকার কাছে টুয়েন্টি-নাইন শেখা, সন্তুর কাছে মান্জা রহস্যের পাঠ নেওয়া - সমস্তই দুপুরের অছিলায়। 


এখন ফাইল এসেছে, বসের হাঁক-ডাক এসেছে; দুপুর-গুলো বেমক্কা আফটার-নুন গোছের মুরুব্বি বনে গেছে। অধুনা দুপুরের সামান্য একলা মুহুর্তে মামনের কথা মনে আসে। সে এখন ক্যানাডাতে চমত্কার এক চাকরি এবং অনাবিল এক সংসার সামলায়- আমাদের দুজনার দুপুর এখন আর একসাথে আসে না। 

কিছু দাবিময় ডাক-নাম

কিছু ডাকনাম যে কেন তেমন ভাবে চলে না। ভেবে মন খারাপ হয় যায়। ছোটমামা হামেশাই বলে যে পোটেনশিয়াল নষ্ট করেই এ দেশ গোল্লায় গেল। হক কথা। কত ফোনেটিক বাহার যে কেতা-দুরুস্ত হতে গিয়ে মূর্ছা গেল তার ইয়ত্তা নেই। এই যেমন নিমকি ; কি অপূর্ব নাম খানি। নিমকি মা’কে বল জলখাবার দিতে, নিমকি পড়তে বস, নিমকি বাঁদরামো করিসনে – কি ব্যাঞ্জনাময় সমস্ত ব্যাবহার।

অথবা ধরা যাক বম্বে। শহর হিসেবে নয়; ডাকনাম হিসেবে। বুম্বা-টুম্বা ফালতু; ওসব ভারি সিনেম্যাটিক। বম্বে – বেশ নাদুস-নুদুস আদুরে নাম।অমন শুনেই মনে হয় কাছে ডেকে নি – কাম হিয়ার বম্বে। একটা আলতো গ্ল্যামার আছে।

ডাকনামের কথাই যখন উঠলো তখন বলি; ভেল্কি নামটির প্রতি আমার বেশ গুচ্ছ দুর্বলতা আছে। ডাক-নামেদের মধ্যে এমন তরুন-তুর্কী নাম পাওয়া দুস্কর।

Monday, May 6, 2013

ঠকানে বৃত্তান্ত

প্রেমিক চোরা প্রেমে প্রেমিকাকে ঠকালে ।

প্রেমিকা ঠকিয়ে অন্য ঠোঁটে চুমু খেলে।

মেঘলা আকাশ ঠকিয়ে দিয়ে ঢেলে দিলে মেঘ।

দোকানি ঠকিয়ে গছিয়ে দিলে বাসি রসগোল্লা।

টেরি ঠকিয়ে টাক নামালে।

বয়েস ঠকিয়ে বাত পাঠালে।

সি-পি-এম ঠকিয়ে গাঁট্টা দিলে, তৃনমূল ঠকিয়ে চাটি মারলে।

কিন্তু সব চেয়ে খুনে ঠকানে বৃত্তান্ত;

ধোকার ডালনা কে ঠকিয়ে; পনীর-ন্যাকামোর বাঙালি রসনায় ঢুকে পড়া।

মর্মান্তিক। মর্মান্তিক। মর্মান্তিক।  

Thursday, May 2, 2013

বাঙালির বিপন্ন ক্যারিস্মা

বাঙালির ক্যারিস্মা কমে যাচ্ছে ক্রমশ। মধ্যবিত্তের ভুঁড়ি নেই, মধ্যবয়স্কের গেঁটে বাত নেই, মধ্য-বুদ্ধি ছাত্রের নধর আলিস্যি নেই। বিরক্তিকর।

পাড়ায় পাড়ায় এখন মাল্টী-জিম আর তার কব্জায় পড়ে পাবলিক চিমসে মেরে চলেছে। এক সময় ধুম ছিল ভোরবেলা আলতো হেঁটে এসে মৌজ করে পরোটা আলুর দম গেলার। এখন ছাই ট্রেড-মিলে নাচুনি ঝেড়ে , ডাইনিং টেবিলে বসে, ইকনমিক্স টাইমসে মুখ গুঁজে; করনফ্লেক্স গেলা। ছিঃ ছিঃ, অমন ফিটনেসের মাথায় বাজ।

ভাত-ঘুম ছিল এক কালের বিউটি-ফ্যাসন। এখন দেবীরা দুপুরে এরবিক্সে নিজেদের নিমজ্জিত করছেন।  ফল ? তোবড়ানো গাল, হাড়গিলে দেহ-পল্লব – অমনটা না হলে নাকি আজকাল চাবুক বলা চলে না। আরে বাবা, বং-ললনা যদি আলতো থলথলে সৌন্দর্য-রসে না ভিজে থাকেন; তাকে কি আর পাতে দেওয়া চলে ?

জিম যে অতি হাড়-হিম করা ব্যাপার; তা এই বেলা পাবলিকে টের না পেলে সমুহ বিপদ।